রাজনীতি

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে জামায়াতের গণমিছিল

সন্ত্রাসী দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিরাট গণমিছিল ও সমাবেশ করেছে মেহেরপুরে জেলা জামায়াতে ইসলাম।

দলটির মেহেরপুরে জেলা আমির ও কেন্দ্রীয় জামায়াতের সুরা সদস্য মাওলানা তাজ উদ্দিন খান বলেন, ইতিহাস সাক্ষী দেয় ৭৫ সালে শেখ মজিবুর রহমান স্বপরিবারে নিহত হওয়ার পর তার জানাজা জোটেনি।

তার মেয়ে শেখ হাসিনা ২০২৪ সালে দেশ ছেড়ে পালানোর সময় পরনের কাপড়টাও গুছিয়ে নিতে পারেননি। এতো দাপট, এতো কলিজা এতো ক্ষমতা অথচ, আওয়ামী লীগকে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া গত ১৫ বছরে মেহেরপুরে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার সকল হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।

রোববার (২৫ আগস্ট) বিকালে মেহেরপুর শহীদ শামসুজ্জোহা নহর উদ্যানে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা তাজ উদ্দিন খান বলেন,জুলাইয়ের ৫ তারিখ পর্যন্ত যারা অত্যাচার জুলুম করেছে, অস্ত্র, বন্দুক, লাঠি হাতে নিয়ে ছাত্র-জনতাকে গুলি করে মেরেছে, সারা দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন করেছে এখন সময়ের দাবি তাদেরকে আইনীভাবে নিষিদ্ধ করা। যারা এলাকার সম্মানিত নেতাকর্মীদের জুডিশিয়াল কিলিং (বিচারিক হত্যা) করেছে, আমরা সেই ঘাতকদের বিচার চাই।

তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের খাঁচার মধ্যে বন্দি করে রেখেছিল। এই ১৫ বছরে আমাদের স্বাধীনতাই ছিল না অথচ তারা আমাদের স্বাধীনতার গল্প শোনায়, বঙ্গবন্ধু টানেলের গল্প শোনায়।

জামায়াতের এ নেতা বলেন, বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী সরকার ছোট্ট জেলা মেহেরপুরে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে ৮৬ টি মিথ্যা মামলা দিয়ে জামায়াতের ১০০ নারী কর্মীসহ এক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় জেল দিয়ে বারবার রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছে। জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের বাড়ি ঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বাড়িঘর। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে রাজনীতি করতে গিয়ে এতো ত্যাগ, এতো কোরবানি আর কোনো রাজনৈতিক দলকে দিতে হয়নি।

এমন কোনো অপরাধ নেই যা জামায়াতের ওপর করা হয়নি। আর কত জুলুম নির্যাতন করলে জুলুমের শেষ হয় তা আমাদের জানা নেই। আমাদের হাজারো নেতাকর্মী তাদের বাড়িতে ঘুমাতে পারেনি। মাঠে ঘাটে ঘুমিয়ে রাত কাটাতে হয়েছে। বিগত ১৭ বছর যাবৎ জামায়াত-শিবিরকে এসব মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

তিনি প্রশ্ন করেন, আমরা কি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছি? তারপরেও জামায়াত ছিল, জামায়াত আছে, আগামীতেও জামায়াত থাকবে। এটা যে এতো অবিচার ছিল শেখ হাসিনার পালানো দেখলেই বোঝা যায়। পালানোর সময় তার নেতাকর্মীর দিকে তাকানোর সময় ছিল না শেখ হাসিনার।

মাওলানা তাজ উদ্দিন খান আরও বলেন, মেহেরপুর জেলা শিবিরের সাবেক সভাপতি ও তৎকালীন জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তারিক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। যারা পরামর্শ করে ঠান্ডা মাথায় প্রশাসন দিয়ে হত্যা করেছে তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। যারা তারিক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আব্দুল জব্বার, সোলাইমান হোসেন, দেলওয়ার হোসেন, আব্বাছ আলীকে হত্যা করেছে আমরা সেইসব খুনিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এসব খুনের বিচার করতে না পারলে মহান রবের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।

তিনি বলেন, ছাত্র-আন্দোলন ও তাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি। এই স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন দিয়েছে তাদের মৃত্যুকে শহীদি মৃত্যু এবং যারা আহত হয়ে এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন তিনি।

জামায়াতের জেলা থেকে শুরু করে প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ২০ লাখ টাকা উত্তোলন করে বন্যাদুর্গত বানভাসি মানুষের সাহায্যের জন্য পাঠানোর অনুরোধ জানান তিনি।

সমাবেশ অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা মাহবুব উল আলম, জেলা সেক্রেটারি মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, জেলা জামায়াতের রাজনৈতিক সেক্রেটারি কাজী রুহুল আমিন, গাংনী উপজেলা জামায়াতের আমীর ডাক্তার রবিউল ইসলাম, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মুকুল, জেলা যুব বিভাগের সভাপতি ও পৌরসভার কাউন্সিলর সোহেল রানা ডলার, সদর উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা সোহেল রানা, মুজিবনগর উপজেলা আমীর খান জাহান আলী, গাংনী পৌর জামায়াতের আমীর মাওলানা আব্দুর রহমান, জেলা শিবিরের সাবেক সভাপতি সাব্বির হুসাইন,পৌর শিবিরের সভাপতি বকুল হোসাইন প্রমুখ।

এর আগে তাজ উদ্দিন খানের নেতৃত্বে একটি বিশাল গণমিছিল মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মেহেরপুর শহীদ ড. শামসুজ্জোহা নগর উদ্যানে গিয়ে শেষ হয়। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে গণমিছিলে যোগ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *