চট্টগ্রাম

আমিরাতে ক্ষমা পাওয়া প্রবাসী: নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরলেন ফটিকছড়ির সুমন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে বিভিন্নভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে শাস্তি পেয়েছিলেন ৫৭ প্রবাসী বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে সোমবার রাতে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছেন মুহাম্মদ সুমন (৩৭)। তিনি দেড় বছর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পরিবারের অন্ন যোগাতে গিয়েছিলেন।

দেশে ফেরা ওই প্রবাসী মুহাম্মদ সুমনের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভার দক্ষিণ দৌলতপুর গ্রামের নুরুল্লাহ মুন্সির বাড়িতে। সাদামাটা জীবনযাপনকারী সুমন এখন নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরেছেন।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে প্রবাসী মুহাম্মদ সুমন বলেন, ‘চোখের পলকে সব এলোমেলো হয়ে গেল। দেশে গণহত্যার প্রতিবাদ জানাতে গণমাধ্যমের এক ব্যক্তির কাছে দাঁড়ালাম। আবুধাবির পুলিশ ধরে নিয়ে কাউকে দিল যাবজ্জীবন আবার কাউকে জেল। কারাগারে শুধু কাঁদতাম। এক বেলা ভাত দিত। দুই বেলা রুটি। এক রুমে থাকতাম ৩১ জন। এভাবেই কাটে ৪৫ দিনের অনিশ্চিত জীবন।’

তিনি বলেন, ‘মুক্তির খবর যেদিন শুনলাম, মনে হলো নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। তবে প্রাণ নিয়ে দেশে ফিরলেও সব তছনছ হয়ে গেছে। নিঃস্ব হয়ে গেছি। কিছুই আনতে পারিনি। কখনো আর যেতেও পারব না। বাকি জীবন কীভাবে কাটাব? মাথায় বহু ঋণের বোঝা। ৯ সদস্যের পরিবার আমার উপরই ভরসা করেন।’

সুমন আরও বলেন, ‘আমিরাতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে ২৫ বছরের জেল। দণ্ড মওকুফ না হলে বাকি জীবন হয়তো জেলেই কাটাতে হতো। কিছুই আনতে পারিনি। শুধু প্রাণটা নিয়ে এসেছি।’

কান্নাজড়িত কন্ঠে সুমন বলেন, ‘ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে দুই মিনিটের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলাম। সেখানে কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করে প্রতিবাদ জানিয়েছি। কিন্তু পুলিশ যে এত প্রতিক্রিয়া দেখাবে, জানা ছিল না।’

অন্তর্বর্তী সরকার তাদের দণ্ড মওকুফের উদ্যোগ নেওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। তিনি বলেন, ভেবেছিলাম দণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে আর মুক্তি মিলবে না। কিন্তু সরকার উদ্যোগ নেওয়ায় মুক্ত হয়েছি। চাকরি গেলেও অন্তত পরিবারের সঙ্গে একত্রিত হতে পারছি। আমাদের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া অনেকে এখনো দেশে ফেরেনি। সরকার যেন তাদের ফেরানোর ব্যবস্থা নেয় সে প্রত্যাশা করছি।’

মোহাম্মদ সুমন সোমবার রাতে এয়ার আরাবিয়ার একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখানে উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সরোয়ার আলমগীর তাকে স্বাগত জানান এবং ফুল দিয়ে বরণ করেন।

নিজ দেশে ফিরতে পেরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মো. ইউনুসকে ধন্যবাদ জানান তিনি। সুমন বলেন, ‘দণ্ড পাওয়াদের কেউ বিদেশে ব্যবসা আবার কেউ চাকরি করতেন। কিন্তু সবার পাসপোর্টে নো এন্ট্রি সিল দেওয়া হয়েছে। তারা যেন আবারও সেখানে ফিরে যেতে পারেন, সে বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নেবেন।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে আমিরাতে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় দণ্ডিত হয়েছিলেন ৫৭ বাংলাদেশি। এর মধ্যে ৩ জনকে যাবজ্জীবন, ৫৩ জনকে ১০ বছর এবং বাকি ১ জনকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে গত ২৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে টেলিফোনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের কথা হলে তিনি ৫৭ শ্রমিকের শাস্তি মওকুফ করতে অনুরোধ করেন। পরে দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান তাদের বিশেষ ক্ষমা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *