চট্টগ্রামশিক্ষা

‘আমি একজন প্রিন্সিপাল, মিথ্যা কথা বলি না’

আমি এড়িয়ে যেতে চাই, কিন্তু সম্ভব হয় না। ২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রামের জামাল খান সড়কের বাসায় ঢুকে গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে হত্যা করে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা।

তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে এভাবেই স্মৃতিচারণ করলেন প্রবাসী মেয়ে সুদীপ্তা মুহুরী।
চট্টগ্রামের নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে হত্যার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী উমা মুহুরী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন। ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে মামলাটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। কলেজে শিবির নিষিদ্ধ করাকে কেন্দ্র করে তাঁকে খুন করা হয় বলে আসামিরা জবানবন্দিতে জানিয়েছিল।

আসামিরা হলো- নাসির প্রকাশ গিট্টু নাসির, মোহাম্মদ আজম, আলমগীর ও তছলিম উদ্দিন প্রকাশ মন্টু। এছাড়া মহিউদ্দিনসহ চারজনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তাদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত গিট্টু নাসির ২০০৫ সালের ২ মার্চ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ক্রসফায়ারে নিহত হয়। মারা যায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত সাইফুল প্রকাশ ছোট সাইফুল।

ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে ২০০৬ সালের জুলাইয়ে হাইকোর্ট এর রায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি শাহাজাহান ও ছোট সাইফুল খালাস পায়। এরপর মৃত্যুদণ্ডের আসামি আলমগীর খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে আপিল করে এবং তছলিম উদ্দিন প্রকাশ মন্টু ও মোহাম্মদ আজম জেল আপিল করে। ২০২০ সালে আপিল বিভাগ তিন আসামির সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডের আদেশ দেন।

জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা একটি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে জামালখান লিচুবাগানের গলিতে এসেছিল এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে। তাদের হাতে ছিল ভারী অস্ত্রশস্ত্র। হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে বিবৃতি দিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই বাসায় গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে ছুটে এসেছিলেন শেখ হাসিনা, সঙ্গে ছিলেন সাজেদা চৌধুরী, বাহাউদ্দিন নাসিম, মহিউদ্দিন চৌধুরী ও কয়েকজন সংসদ সদস্য।

মেয়ে সুদীপ্তা মুহুরীর কথায়, ‘বাবা নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করেছিলেন সেই কলেজের। বাংলাদেশেই এটা সম্ভব হয়েছিল একসময়, ভাবা যায়! হ্যাঁ, জামায়াত-শিবিরের দখল রাজনীতি। সময়কাল ৯০ এর গোড়ার দিকে বা মাঝামাঝি সময়ে। বাবার সহকারীরা ভালো জানবেন। বাবার অসংখ্য কাজের মধ্যে এটা শুধু একটা। এসব অসংখ্য কাজের জন্য বাবা পুরষ্কারও পেয়েছিলেন। আমাদের বাবা গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে হত্যার বাইশ বছর পূর্ণ হলো আজ’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *