চট্টগ্রাম

গরীবের শপিংয়ে মূল্যস্ফীতির প্রভাব

ঈদের বাকি আর মাত্র কয়েকটা দিন। এসময়ে বেচাকেনা জমে ওঠার কথা ছিল মার্কেটগুলোতে।

কিন্তু মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি যেন হ্রাস টেনেছে এবারের ঈদ বাণিজ্যে। আর্থিক সংকট, পোশাকের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে ক্রেতা কমেছে ঈদ বাজারে। যার প্রভাব পড়েছে নিম্নবিত্তের ভরসার হকার্স মার্কেটেও।

চট্টগ্রাম নগরীর নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের মার্কেট হিসেবে পরিচিত ‘জহুর হকার্স মার্কেট’। অভিজাত শপিংমলের চেয়ে তুলনামূলক কম দাম হওয়ায় এ মার্কেটে আস্থা এসব স্বল্প আয়ের মানুষের। কিন্তু সেখানেও পোশাকের দাম বাড়ায় হতাশ ক্রেতারা।

মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা থাকলেও বিকিকিনি অনেকটাই কম। সববয়সী মানুষের সব ধরনের কাপড় পাওয়া গেলেও দামও কিছুটা বেশি। একটি ভালো মানের জিন্স প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে দেড় হাজার টাকায়, যা গত বছরও ছিল ৫০০ থেকে হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া শার্ট ৭০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকায়, পাঞ্জাবি দেড় হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এ মার্কেটে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

অন্যদিকে নারীদের থ্রি-পিস প্রতিটি ২ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে গরীবের এ মার্কেটে। যা বছরখানেক আগেও পাওয়া যেত ৫০০-১০০০ টাকা কমে। একই অবস্থা শিশুদের কাপড়েও। সাইজ ও ডিজাইনভেদে প্রতিটি জামার দাম বেড়েছে ৫০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত। তাছাড়াও ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের বিভিন্ন চরিত্রের নামানুসারে বাজারে আসা পোশাকগুলোর নামের ভিন্নতায়ও দাম বেড়েছে কয়েকগুণ।

পোশাকের এমন আকাশ ছোঁয়া দামে হতাশ সাধারণ ক্রেতারা। এই যেমন সাত বছরের কন্যা নাফিসাকে নিয়ে শপিং করতে আসা নূর ইসলাম পড়েছেন বিপাকে। সন্তানের আবদার মিটাতে চড়া দামে কিনতে হয় পছন্দের জামা। বাজেট না থাকলেও সন্তানের হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে সব কষ্টই যেন নিরবে মেনে নিয়েছেন তিনি।

নুর ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, আগে ছোট মেয়ের জামার দাম সাইজ ও মানভেদে দেড় থেকে দুই হাজারের মধ্যে কেনা যেত। এখন তা বেড়েছে আড়াই থেকে তিন হাজার। আমার যে বাজেট ছিল তা থেকেও বেশি। কিন্তু সন্তানের আবদার তো ফেলতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে চড়া দামেই কিনতে হলো জামা।

হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি বেসরকারি কোম্পানিতে ছোট্ট একটা পদে চাকরি করি। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে কিন্তু আমাদের আয় বাড়েনি। এই ঈদে সন্তানদের চাহিদা অনুযায়ী কাপড় কিনে দেব সেই সাধ্যও হারিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে সন্তানদের নতুন জামা কিনে দেওয়া কঠিন হবে।

শপিং করতে আসা রুহুল নামের আরেক ক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, তুলনামূলক কম দামে শপিং করা যায় বলে এখানে এসেছি। কিন্তু পোশাকের দাম বেশি মনে হচ্ছে। হকার্স মার্কেটে এত দাম হলে অভিজাত শপিংমলগুলোতে কেমন হতে পারে সেটাই ভাবছি।

এদিকে, রমজানের শেষ সময়ে এসেও বেচাকেনা জমে উঠেনি বলে দাবি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের। জহুর হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. ইলিয়াস উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, গতবছরও মার্কেটে যে ব্যবসা ছিল তা এবার কমে গেছে। রোজার এসময়ে এসে আশানুরূপ ব্যবসা হচ্ছে না। ঈদ সামনে রেখে যা ইনভেস্ট করেছি, তা উঠে আসলেই হবে। ব্যবসায় এমন মন্দার পিছনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে দায়ী করছেন তিনি।

জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, পোশাকের দাম আগের মতই আছে। কিন্তু অন্যান্য জিনিসের দাম তো বেড়েছে। সাধারণ মানুষ পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচগুলো মেটাতে উপার্জনের সিংহভাগ টাকা খরচ করছেন। সেখানে ঈদ বাজারে স্ত্রী-সন্তানদের শখ মেটানো অনেকের কাছে বিলাসিতা। তাই হয়তো ক্রেতা তুলনামূলক কম। জহুর হকার্স মার্কেটে বেশিরভাগ ক্রেতাই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের। এসময়ে অর্থনৈতিক টানাপোড়েনেও এ শ্রেণির লোকজন। তাই হয়তো ক্রেতা কম। আশা করছি, এ পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াবে দেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *