চট্টগ্রামে নারী সংখ্যায় বেশি, ভোটারে কম
চট্টগ্রামে জনসংখ্যায় পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। অর্থাৎ পুরুষের চেয়ে ২৮ হাজার ৮১৩ জন নারী বেশি। কিন্তু ভোটার তালিকায় দেখা যায় উল্টো চিত্র। পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা অনেক কম। তবে ১৫ বছর আগে পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার বেশি ছিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের ২০২২ সালের তৈরি করা জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালে চট্টগ্রামের জনসংখ্যা ৯১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ জন। এরমধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৪৫ লাখ ৭০ হাজার ১১৩ জন। নারীর সংখ্যা ৪৫ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৬ জন। ২০১১ সালে চট্টগ্রামে মোট জনসংখ্যা ছিল ৭৬ লাখ ১৬ হাজার জন। ১০ বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে ১৫ লাখ ৫৩ হাজার।
জনসংখ্যার অনুপাতে চট্টগ্রামে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা ২৮ হাজার ৮১৩ জন। প্রতি ১০০ জন নারীর অনুপাতে পুরুষের সংখ্যা ৯৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
ভোটার চিত্র: নির্বাচন কমিশনের হিসাবে ২০০৮ সালে চট্টগ্রামে ভোটার সংখ্যা ছিল ৪৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২১ লাখ ৮৭ হাজার ১৩৭ জন। নারী ভোটার ২২ লাখ এক হাজার ৯৩৪ জন। অর্থাৎ পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার ১৪ হাজার ৭৯৭ জন বেশি।
২০০৮ সালের পর থেকে ভোটার তালিকায় নারীর অবস্থান আর ধরে রাখতে পারেনি। পর্যায়ক্রমে নারীর সংখ্যা কমতে থাকে।
সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার তালিকায় চট্টগ্রামের ১৬ আসনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৬৩ লাখ ৩৪ হাজার ৩২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৩ লাখ ৭ হাজার ৬৯২ জন ও নারী ভোটার ৩০ লাখ ২৬ হাজার ৩০৫ জন। অর্থাৎ নারীর চেয়ে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৮১ হাজার ৩৮৭ জন বেশি।
২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল, ১৫ বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রামের ভোটার সংখ্যা বেড়েছে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ৯৬১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার বেড়েছে ১১ লাখ ২০ হাজার ৫৫৫ জন। আর নারী ভোটার বেড়েছে ৮ লাখ ২৪ হাজার ৩৭১ জন।
নির্বাচন বিশ্লেষক ও নারীনেত্রীদের দাবি, ধর্মীয় অনুশাসন ও পর্দার কারণে নারীদের গৃহবন্দী করে রাখতে চায়। পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থায় নারীরা বিভিন্ন কারণেই রাজনৈতিক ও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না। তাই ভোটার তালিকা প্রণয়নেও নারীদের অনেকটা অনীহা দেখা যায়।
নির্বাচন বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ভোটের সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত ভোটাধিকার প্রয়োগে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। নির্বাচন কমিশন নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলেই নারী ভোটার বাড়বে।
ভোটেও নারীরা পিছিয়ে: ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারী ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। এর পরবর্তীতে প্রতিটি নির্বাচনে নারী ভোটার উপস্থিতি কম থাকে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগ্রাবাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার ছিল দুই হাজার ৬১৯ জন। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ২৮৮ জন নারী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ আসনের শিল্পকলা একাডেমির মহিলা কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ২৪৬টি। শিশু একাডেমির পুরুষ কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৭৬৭টি। আর মহিলা কেন্দ্রে ৩৯৩টি।
২০০৮ থেকে সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভোটকেন্দ্রে মহিলা ভোটারের চেয়ে পুরুষের উপস্থিতি ও ভোট প্রয়োগ অনেক বেশি।