চট্টগ্রামে ‘নীরব’ এলাকায়ও মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, মানুষের শব্দ গ্রহণের সহনীয় মাত্রা ৪০ থেকে ৫০ ডেসিবেল। অথচ চট্টগ্রাম মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে শব্দের মাত্রা ৬৭ থেকে ৮২ ডেসিবেল। পরিবেশ দপ্তরের নিয়মিত পরীক্ষণে নগরীর ৩০ স্পটের শব্দের মানমাত্রা পরীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রত্যেকটি স্পটেই শব্দের মান পাওয়া গেছে মাত্রাতিরিক্ত।
নগরীতে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষিত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটক এবং জামাল খান মোড়ের খাস্তগীর স্কুলের সামনেও অতিরিক্ত মাত্রায় শব্দদূষণ পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরজীবনে স্বাস্থ্যঝুঁকির একটি অন্যতম কারণ শব্দদূষণ। নির্মাণকাজ, দ্রুত অপরিকল্পিত নগরায়ন, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে এ সমস্যা ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, গার্মেন্টস শ্রমিক, নির্মাণশ্রমিক, পরিবহন শ্রমিকসহ ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা শব্দদূষণে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। শব্দদূষণকে এখন আরেক নীরব ঘাতক হিসেবে উল্লেখ করছেন চিকিৎসকরাও। বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদে বেশি মাত্রায় শব্দ শুনলে মানুষের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা ওষুধের মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব হয় না। এতে এক সময় বধির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ হয়। এখন চট্টগ্রামেও শব্দদূষণ বাড়ছে। গাড়ির অনির্ধারিত হাইড্রোলিক হর্ন ও সাউন্ড সিস্টেমের কারণে শব্দের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। এতে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ শ্রবণশক্তি হারাচ্ছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম গবেষণাগার কার্যালয়ের পরিচালক নাসিম ফারহানা শিরীন বলেন, ‘আমরা প্রতি মাসেই নিয়মিতভাবে নগরীর বিভিন্ন স্পটের শব্দের মাত্রা পরীক্ষা করি। যেসব এলাকায় মানমাত্রার চেয়ে বেশি শব্দের তীব্রতা পাওয়া যায় সেগুলোর বিষয়ে প্রতিবেদন দেই। শব্দদূষণ রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং মহানগর পুলিশকে এসব বিষয়ে অবহিত করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষকে সচেতন করতে পারি। আইন প্রয়োগ করার সক্ষমতা নেই। আমরা নগরীর শব্দদূষণ কমানোর জন্য পেশাদার যানবাহন চালকদের সচেতন করি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সতেচনতামূলক কার্যক্রম করি। যাতে শব্দের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা যায়।’
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম গবেষণাগার কার্যালয়ের তথ্যমতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল প্রভৃতি স্পটগুলোকে নীরব এলাকা ধরা হয়। এসব এলাকায় শব্দের মানমাত্রা ৪৫ ডেসিবেল। কিন্তু নগরীর এ ধরনের ১৫ স্পটে দেড়গুণের বেশি মাত্রায় শব্দদূষণ ঘটছে।