চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫ দফা প্রস্তাবনা
সকল ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, দেশের সকল পর্যায়ে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের সরিয়ে যোগ্য ও মেধাভিত্তিক নিয়োগ দেওয়াসহ ১৫ দফা প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছে চট্টগ্রামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
শনিবার (১৭ আগস্ট) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীকের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ১৫ দফা প্রস্তাবনা দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীকের সঙ্গে আমাদের আনুষ্ঠানিক মতবিনিময় হয়েছে। সভায় আমাদের পক্ষ থেকে এই মুহুর্তে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য জরুরি ১৫ দফা প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়েছে।
আমরাদের ১৫ দফা প্রস্তাবনা যৌক্তিক। আশাকরি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন করবে।
১৫ দফা প্রস্তাবনাগুলো হলো- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্যে দ্রুত সময়ের মধ্যে দল নিরপেক্ষ ও শিক্ষা এবং গবেষণাবান্ধব প্রশাসন নিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদের দোসর যেন নিয়োগ না পায়। বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলীয় সকল ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ এবং ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে ছাত্র সংসদ চালু করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে যে সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তা অতি উৎসাহী হয়ে হত্যাকাণ্ডে এবং দমন-পীড়নে জড়িত ছিল, তাদেরকে চাকরি থেকে বহিষ্কার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডারদের মধ্যে যারা হামলা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদেরকে দ্রুত সময়ে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন এবং শহীদ পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নামকরণ করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের উন্নত চিকিৎসা ও নিহতদের আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। শেখ হাসিনাসহ পলাতক আওয়ামী লীগের সন্ত্রসীদের আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল পর্যায়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ও দলীয় পরিচয় ভিত্তিতে নিয়োগ প্রাপ্তদের সরিয়ে যোগ্য ও মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বৈষম্য দূরীকরণে সুশাসন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংবিধানের যুগোপযোগী পরিবর্তন করতে হবে। বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাসহ দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিশেষ সুবিধা বাদ দিতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে বর্তমান শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন করে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ১৫ থেকে ২০% বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বন্ধকৃত রাষ্ট্রীয় কলকারখানা দ্রুত সময়ে চালু করতে হবে। শ্রমিকদের প্রাপ্য আধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষাখাতে বৈষম্য দূরীকরণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন্যায়ভাবে অতিরিক্ত টিউশন ফি বাতিল করতে হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে এবং সেশনজট মুক্ত করতে ব্যবস্থা করতে হবে। প্রবাসে অবস্থানরত রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ন্যায় অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিদেশে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে।