জনদুর্ভোগ, ১০০ টাকার ভাড়া ৫০০!
শ্রমিককে মারধরের প্রতিবাদে পূর্বঘোষণা ছাড়াই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে, চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। এদিকে, বাস বন্ধ থাকায় বিকল্প যানবাহন হিসেবে যাত্রীরা বেছে নিয়েছে মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। আর যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে তিনগুণেরও বেশি ভাড়া।
রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে কক্সবাজারসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে কোনো বাস চট্টগ্রাম ছেড়ে যায়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভাড়া করা মোটরসাইকেল চলাচল করছে। এতে দাঁড়িয়ে থাকা সিএনজিচালিত অটোরিকশা দোহাজারী, আমিরাবাদ ও কেরানিহাট পর্যন্ত জনপ্রতি তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা দাবি করছে। আর মোটরসাইকেল চালকরা জনপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন। অনেকে বাধ্য হয়েই বাড়তি ভাড়া দিয়ে গন্তব্য যেতে রাজি হয়েছেন।
কাউন্টার-সড়কজুড়ে যাত্রীদের ভোগান্তি
বিভিন্ন কাউন্টার ও পয়েন্টে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে যাত্রীদের। অনেক যাত্রী বাস কাউন্টারে এসে গাড়ি না পেয়ে কাউন্টারের সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন।
তাওহীদ নামে এক যাত্রী সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘এখানে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। জরুরি কাজে একটু বাড়িতে (কেরানিহাট) যেতে হচ্ছে। কিন্তু গাড়ি বন্ধ তাই যেতে পারছি না। বাধ্য হয়ে সিএনজি ও মোটরসাইকেল দেখছিলাম। অনেক বেশি ভাড়া চাচ্ছেন তারা।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা নিয়মিত নতুন ব্রিজ থেকে বাসে ১০০ টাকা ভাড়ায় কেরানি হাট যাই। কিন্তু এখন গাড়ি বন্ধ থাকার সুযোগে মোটরসাইকেল জনপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং সিএনজি জনপ্রতি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা চাচ্ছে।’
তবে অনেকেই প্রয়োজনের কারণে বাধ্য হয়েই বাড়তি ভাড়া গুনেই গন্তব্যস্থলে চলে যাচ্ছেন।
দেখা গেছে, দুই যাত্রী কেরানি হাট পর্যন্ত ৭০০ টাকায় মোটর সাইকেল ভাড়া করেছেন। তারা বলেন, প্রথমে ৯০০ টাকা বলেছিলেন মোটরসাইকেল চালক, পরে অনেক জোরাজুরির পর এখন ৭০০ টাকা যেতে রাজি হয়েছেন।
আলাউদ্দিন নামে ওই মোটরসাইকেল চালক জানান, প্রায় ১ ঘণ্টা লাগবে সেখানে পৌঁছাতে। আর আসার সময় যাত্রী যদি না পাই তাহলে লস (ক্ষতি) হবে। সেজন্য এদিক থেকে যাওয়ার সময় সবকিছু হিসাব করেই যাত্রী তুলতে হচ্ছে।
এদিকে, পরিবহন সংশ্লিষ্টদের একজন মোহাম্মদ ইসহাকের সঙ্গে কথা হলে তিনি সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) রাতে ঈগল পরিবহনের এক চালককে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দোহাজারী কসাই পাড়া এলাকায় মারধরে করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ সকাল থেকে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, আমরা যাত্রীদের এমন কষ্টের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি ৷ গাড়ি না চলার কারণে যাত্রীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। তাই আমরা চাই দ্রুত একটা সমাধানের মাধ্যমে আমরা যেন গাড়ি চালাতে পারি। আর যাত্রীরাও যাতে তাদের ন্যায্য ভাড়া দিয়ে গন্তব্য পৌঁছাতে পারেন।
সূত্র জানিয়েছে, শনিবার রাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বাসের লাইন ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিরোধের জেরে ওই বাস চালককে মারধর করা হয়। সেখান থেকেই ঘটনার সূত্রপাত হয়।
গাড়ি চলাচল না করায় দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে গাড়ি না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। কেউ পায়ে হেঁটে, কেউবা তিন চাকার বাহনে চড়ে ছুটছেন গন্তব্যে। গুনছেন বাড়তি ভাড়া।
আরাকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের এক সমন্বয়ক বলেন, ‘সেক্রেটারি মুসা নির্বাচন ছাড়াই গত ১৭ বছর আমাদের রক্ত চুষে খেয়েছে। এখন সে অবৈধভাবে চাঁদাবাজি করতে চাচ্ছে। আমরা আর সেটা হতে দিব না। তাদের নির্যাতনে গত ১৭ বছরে এ পর্যন্ত ৮ হাজার শ্রমিক এ পেশা ছেড়ে চলে গেছে। আমরা এ স্বৈরাচার আর চাই না।’
শ্রমিকদের দাবি, অতিরিক্ত চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় পরিবহন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. মুসা অবৈধ শ্রমিক লেলিয়ে প্রকৃত শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছে। তাদের এক সিনিয়র ড্রাইভার ভাইকে মেরেছে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে মাঠে নেমেছেন শ্রমিকরা।