জাতিসংঘের ১৯০ কর্মী ‘জঙ্গি’ হিসেবে কাজ করছে, দাবি ইসরায়েলের
জাতিসংঘের ১৯০ জন কর্মী ‘জঙ্গি’ হিসেবে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অভিযানের সময় সংস্থাটির কিছু কর্মী অপহরণ এবং হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল।
ইসরায়েল তাদের ৬ পৃষ্ঠার গোয়েন্দা নথিতে এই দাবি করেছে। অবশ্য ইসরায়েলের এই অভিযোগের জেরে ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর অর্থায়ন স্থগিত করেছে বেশ কিছু দেশ।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের ৬ পাতার গোয়েন্দা নথিটি রয়টার্স দেখেছে। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, শিক্ষকসহ ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রায় ১৯০ জন কর্মী হামাস বা ইসলামিক জিহাদের সদস্য হিসাবে কাজ করছে। নথিতে তাদের ১১ জনের নাম ও ছবিও রয়েছে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক সোমবার বলেছেন, জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের এই গোয়েন্দা নথির অনুলিপি পায়নি।
অবশ্য ফিলিস্তিনিরা ইউএনআরডব্লিউএ-কে কলঙ্কিত করার জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ করেছে। যদিও অভিযোগ সামনে আসার পর জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক এই সংস্থাটি তাদের কিছু কর্মীকে বরখাস্ত করেছে এবং অভিযোগগুলো তদন্ত করার কথা জানিয়েছে।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা নথিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ১১ জনের মধ্যে একজন হচ্ছেন, স্কুল কাউন্সেলর। তিনি ইসরায়েলে হামাসের হামলার সময় এক নারীকে অপহরণের জন্য তার ছেলেকে সহায়তা করেছিলেন।
ইসরায়েলের দাবি, হামাসের সেই হামলায় ১২০০ জন নিহত হয় এবং আরও ২৫৩ জনকে বন্দি করা হয়েছে। যদিও এই বন্দিত্বকে ইসরায়েল অপহরণ বলে আখ্যায়িত করে থাকে।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা নথিতে ইউএনআরডব্লিউএ-এর আরেক কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের এক সেনার মৃতদেহ গাজায় নিয়ে যাওয়ায় তিনি জড়িত ছিলেন। এছাড়া হামাসের হামলাকারী এবং তাদের অস্ত্র বহনের জন্য পিক-আপ ট্রাক চলাচলের গতিবিধিও এই ব্যক্তি সমন্বয় করেছিলেন।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা নথিতে তৃতীয় আরেকজন ইউএনআরডব্লিউএ-এর কর্মীর বিরুদ্ধে ইসরায়েল সীমান্তের বিরি গ্রামে তাণ্ডব চালানোর জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। সেই হামলায় ওই গ্রামের দশ ভাগের এক ভাগ বাসিন্দা হামাসের নিহত হয়েছিল।
এছাড়া চতুর্থ একজনের বিরুদ্ধে রেইমের সেনা ঘাঁটিতে আক্রমণে অংশ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া গানের অনুষ্ঠানেও হামলায় জড়িত ছিলেন তিনি। সেখানে ৩৬০ জনেরও বেশি লোক মারা গিয়েছিল।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজারিনির পদত্যাগ করা উচিত। তার ভাষায়, ‘ইউএনআরডব্লিউএর কর্মীরা গত ৭ অক্টোবরের গণহত্যায় অংশগ্রহণ করেছিল। লাজারিনির উচিত চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং পদত্যাগ করা।’
এদিকে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শাতায়েহ ইসরায়েলকে সংস্থাটির ওপর ‘পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক আক্রমণ’ করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। একইসঙ্গে জাতিসংঘের এই সংস্থাটির সাহায্য তহবিল পুনরায় চালু করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রয়টার্স বলছে, ইসরায়েলের এই গোয়েন্দা নথিটি এমন একটি সূত্র তাদেরকে দিয়েছেন যার নাম বা জাতীয়তা চিহ্নিত করা যায়নি। তবে ওই সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলের গোয়েন্দারা এই নথি তৈরি করেছে এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিয়েছে। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র গত শুক্রবার ইউএনআরডব্লিউএ-তে অর্থায়ন স্থগিত করে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ গাজায় কাজ পরিচালনা করা জাতিসংঘের বৃহত্তম সংস্থা। সংস্থাটি গাজা, পশ্চিম তীর, জর্ডান, লেবানন এবং সিরিয়ার ফিলিস্তিনিদের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা প্রদান করে। গাজার অভ্যন্তরে সংস্থাটির প্রায় ১৩ হাজার কর্মী রয়েছে।