জাতীয় দলের জার্সিটা গায়ে জড়াতে চাই: কাঞ্চন
ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি লিগে এবার দুর্দান্ত খেলছে বাংলাদেশ পুলিশ স্পোর্টিং ক্লাব। গেল ৯ মার্চ দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে লিগ শুরু করে দলটি। প্রথম ম্যাচেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পুলিশ টিম।
ওই ম্যাচে দলকে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দেন গোলরক্ষক মো. কাঞ্চন মিয়া। অবশ্য চলমান লিগ কিংবা সদ্য শেষ হওয়া ক্লাব কাপ হকি প্রতিযোগিতাতেই নয়। পুলিশের জার্সিতে সেই শুরু থেকেই দারুণ সব পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে চলেছেন কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ এলাকার সন্তান অভিজ্ঞ গোলরক্ষক কাঞ্চন।
পুলিশের জার্সিতে প্রতিযোগিতামূলক আসরে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে খেলছেন কাঞ্চন। অথচ শুরুতে কিন্তু পুলিশ হকি দলের গোলরক্ষক ছিলেন না। ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ফুটবল দলের গোলরক্ষক। ২০০৭-২০০৯ সাল পর্যন্ত ফুটবলের গোলবারে সামলেছেন কাঞ্চন। পরে ২০০৯ সালে যোগ দেন পুলিশ হকি ক্লাবে।
দুই বছর কঠোর অনুশীলন করে ২০১১ সালে পুলিশের হয়ে প্রতিযোগিতামূলক আসরে অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে হকিতে শুরু। সেই যাত্রা এখনো চলমান কাঞ্চনের। পুলিশের জার্সিতে খেলতে পারাকে সম্মানের বলে মন্তব্য এ তারকা গোলরক্ষকের।
মালেক, হাবিব, সোহাগ, শাওন, রাশেদ, রাতুল, নাঈম, জাহিদ, আনিস, সোহেল, আফসারদের মতো ঢাকা লিগে খেলা অভিজ্ঞ দেশিদের পাশাপাশি এবার ভারত, পাকিস্তানের মতো বড় দেশের নামি-দামি সব খেলোয়াড় এনে দল গড়েছে পুলিশ। বিশেষ করে পুলিশ টিমে পাকিস্তান জাতীয় দলের মিডফিল্ডার ইহতিসাম আসলাম চলতি আসরে সেরা বিদেশি হিসেবে ইতোমধ্যে সবার নজর কেড়েছেন। লিগে এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই খেলছে পুলিশ। তার আগে অবশ্য সুপার সিক্সে জায়গা করে নিতে চায়।
এ ব্যাপারে কাঞ্চন বলেন, ‘পুলিশ সব সময় লড়াকু টিম হিসেবে সকলের নিকট পরিচিত, সমাদৃত। এবার চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার জন্যই আমরা লড়ছি। ম্যানেজার তরিক স্যার (এএসআই তরিকুল ইসলাম), কোচ হাবুল ভাইয়ের (মাকসুদ আলম হাবুল) পরিকল্পনা মেনে আমরা মাঠে খেলছি। এখন পর্যন্ত আমরা নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিছু পরিকল্পনা মাঠে হয়তো বাস্তবায়ন করতে পারছি না। তবে আমাদের দলের সেই সামর্থ্য আছে। আমরা যে কোনো পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে জানি। কারণ আমরা সুশৃঙ্খল বাহিনীর প্রতিনিধি। ’
কোচ-ম্যানেজারের পাশাপাশি মাঠের বাইরে থেকেও যথেষ্ট সাপোর্ট পাচ্ছে পুলিশ হকি টিম। যখন যা প্রয়োজন হচ্ছে সেই সবের ব্যবস্থা দ্রুত করছেন পুলিশ হকি ক্লাবের সম্পাদকসহ অন্য কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে কাঞ্চন বলেন, ‘আমাদের পুলিশ হকি ক্লাবের মাননীয় সম্পাদক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (মতিঝিল) হায়াতুল ইসলাম খান পিপিএম স্যার, আমাদের ক্লাব ম্যানেজার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মতিঝিল) রওশানুল হক সৈকত বিপি স্যার মাঠের বাইরে থেকে সব সময় আমাদের দলকে উৎসাহ-প্রেরণা যুগিয়ে যাচ্ছেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও মাঠে এসে আমাদের খেলা দেখছেন। ম্যাচের আগে এবং পরে নানান বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরা যাতে ভালো করি সেজন্য স্যারদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। এমন একটা দলের অংশ হতে পারা সত্যিই গর্বের এবং সম্মানের। পুলিশ টিম অন্যদের জন্যও আদর্শের। ’
চাকরিসূত্রে পুলিশের সঙ্গে গাঁটছড়া কাঞ্চনের। সেটা ২০০৬ সাল থেকে। কনস্টেবল কাঞ্চন থেকে আজকের নামকরা হকি গোলরক্ষক। তবে খেলাধুলার পাশাপাশি নিজের কনস্টেবল পরিচয়কে অনেক বড় করে দেখেন। এ ব্যাপারে কাঞ্চন বলেন, আমি আজ যা কিছু হতে পেরেছি, আমার যা কিছু অর্জন সবই পুলিশ টিমে খেলার কারণে। পুলিশে চাকরি না পেলে আমার জীবন হয়তো অন্যরকম হতো। একজন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের মতো জীবন হতে পারত। কিন্তু পুলিশ হকি ক্লাবে খেলার কারণে আমাকে এখন অনেকে চেনেন-জানেন। হকি অঙ্গন ছাড়াও আমার কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জের মানুষও জানে যে আমি একজন হকি খেলোয়াড়। এই পরিচয়টা আমার জন্য বিরাট সম্মানের এবং আমার জীবনের অনেক বড় প্রাপ্তিও। ’
ভুল কিছু বলেননি কাঞ্চন। পুলিশ টিমে ভালো খেলার সুবাদেই কিন্তু ২০২২ সালে দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত জনপ্রিয় ফ্রাঞ্চাইজি হকি লিগে খেলার সুযোগ মেলেছে কাঞ্চনের। তাও যে সে টিমে নয়। একেবারে চ্যাম্পিয়ন টিমের অংশ ছিলেন। ফ্রাঞ্চাইজি লিগে খেলেছেন একমি চট্টগ্রামের জার্সিতে। সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে কাঞ্চন বলেন, ‘২০২১ সালে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত লিগে আমার পারফরম্যান্স অনেক ভালো ছিল। সেই কারণে মূলত আমার ফ্রাঞ্চাইজি লিগে সুযোগ মেলে। আমি একমি চট্টগ্রামের হারুন স্যার (মাহবুব হারুন), রাজিব স্যার (হেদায়েতুল ইসলাম খান রাজিব), খোকন ভাই (শহিদুল্লাহ খোকন) তাদের অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। ফ্রাঞ্চাইজি লিগ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। দেশি-বিদেশি অনেক ভালোমানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে মেশার এবং তাদের চেনা-জানার সুযোগ হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা আসলে ভোলার নয়। ’
পুরনো ঢাকার তৃণমূলের জনপ্রিয় কোচ ওস্তাদ ফজলুর কাছ থেকে হকিতে তালিম নিয়েছেন কাঞ্চন। পুলিশ টিমে এরপর পাকিস্তানের আনসারী এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে আগত রুহুল এবং মাকসুদ নামে আরো দুজনের কাছ থেকে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে দীক্ষা নিয়েছেন কাঞ্চন। গুরুদের কথা এখনো সম্মানের সঙ্গে স্মরণে রেখেছেন। পরিবার থেকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট ছিল বলেই এতদূর আসা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য তার। পরিবারে বাবা, মা ছাড়াও দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট এবং আদরের কাঞ্চন। পুলিশের জার্সিতে খেলার স্বপ্নটা বহু আগেই পূরণ হয়ে গেছে। মনের কোণে তাই একটাই স্বপ্ন আঁকিবুঁকি কাটে, জাতীয় দলের জার্সিটা কবে গায়ে উঠবে। আর এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন হকি অঙ্গনে সকলের প্রিয় মুখ, পরিচিত মানুষ অভিজ্ঞ গোলরক্ষক কাঞ্চন।