তৃতীয় ধাপে ৮৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরু
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ৮৭ উপজেলায় ভোটের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থীর মৃত্যু, মামলা, বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতার একক প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়া এবং রেমালের দুর্যোগ বিবেচনায় ২৫টি উপজেলার ভোট স্থগিত করে কমিশন। ফলে এ ধাপে আজ ৮৭টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। যা চলবে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন, তৃতীয় ধাপের উপজেলাগুলোয় সাধারণ নির্বাচনের জন্য ইসি ও মাঠ পর্যায়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে অনেক নির্বাচনী এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের প্লাবিত হয়েছে, বেড়ি বাঁধ ভেঙেছে, কোথাও গাছ ভেঙে পড়েছে। কোথাও সড়ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এজন্যে কিছু উপজেলায় আপাতত ভোট স্থগিত করা হয়েছে।
ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই ধাপে ১৬টি উপজেলায় ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়া বাকিগুলোতে প্রচলিত ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হচ্ছে।
ভোটতথ্য
ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানিয়েছেন, মঙ্গলবার নির্বাচন সামগ্রীর সঙ্গে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে ৪১৪ কেন্দ্রে। এছাড়া ৭ হাজার ৩৬ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে আজ বুধবার সকালে।
ভোট: ৮৭ উপজেলায়
কেন্দ্র: ৭ হাজার ৪৫০টি
ভোটকক্ষ: ৫৪ হাজার ৮৯টি
ভোটার: ২ কোটি ৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৮৪ জন
পুরুষ ভোটার: ১ কোটি ৬ লাখ ৪০ হাজার ৩৪৭ জন
নারী ভোটার: ১ কোটি ২ লাখ ৩৪ হাজার ৭২৩ জন
হিজড়া ভোটার: ১১৪ জন
প্রার্থী ও অন্যান্য
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে ভোট করার সুযোগ থাকলেও স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বা মনোনয়ন দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। অন্যদিকে বিএনপির অল্প কিছু নেতার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়লেও, দলটি উপজেলা পরিষদের ভোট বর্জন করেছে।
তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা হয়েছিল ১১২ উপজেলার। কিন্তু প্রার্থী মৃত্যু, বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রার্থী নির্বাচিত, মামলার কারণে ভোট স্থগিত এবং রেমালের কারণে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন থাকায় সব মিলিয়ে ২৫টি নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বুধবার ভোটগ্রহণ হচ্ছে ৮৭ উপজেলায়।
এই ধাপে মোট ১ হাজার ১৫২ জন প্রার্থী রয়েছেন।
তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩৯৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৫৬ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৯৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ ধাপে চেয়ারম্যান পদে ১ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৪ জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন; অর্থাৎ মোট ১২ জন প্রার্থী ইতোমধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় তিনটি পদেই একক প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে ১টি উপজেলায় ভোট করার প্রয়োজন পড়ছে না।
প্রার্থীর মৃত্যু ও মামলা জনিত কারণে স্থগিত ২টি— নরসিংদীর রায়পুরা ও যশোর সদর।
ঘূর্ণিঝড় রেমালে স্থগিত ২২ উপজেলাগুলো হলো— শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, মংলা, কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, পটুয়াখালী সদর, মির্জাগঞ্জ, দুমকী, মঠবাড়িয়া, তজুমদ্দিন, লালমোহন, রাজাপুর, কাঠালিয়া, বামনা, পাথরঘাটা, বাঘাইছড়ি, কচুয়া, ফরিদগঞ্জ ও খালিয়াজুরী।
নিরাপত্তা
ইসি জানিয়েছে, নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৭ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ থেকে ১৯ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিশেষ এলাকায় (পার্বত্য ও দুর্গম এলাকা) সাধারণ কেন্দ্রে ১৯জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ থেকে ২১ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
ভোটের মাঠে নিয়োজিত রয়েছেন শতাধিক নির্বাহী বিচারক। উপজেলাভিত্তিক বিচারিক হাকিমরাও নিয়োজিত থাকবেন। ভোটের আগে ও পরে চারদিনের জন্য আরও নির্বাহী ও বিচারকি হাকিম নিয়োজিত থাকবেন।
তৃতীয় ধাপে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ২২৯ প্লাটুন বিজিবি নিয়োজিত রয়েছেন। ভোটকেন্দ্রে পুলিশ সদস্য আছেন ২৯ হাজার ৯৫৮ জন এবং মোবাইল টিমে ৭ হাজার ৭৯৪ জন ও স্ট্রাইকিং ফোর্সে ৩ হাজার ৩৬৪ জন পুলিশ সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। আর সব মিলিয়ে ৫৯ হাজার ২১৯ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে এই ভোটে।
আইনশৃঙ্খল পরিস্থিতি রক্ষায় র্যাবের ২৩০টি টিম মাঠে রয়েছে। ভোটকেন্দ্র, মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সে আনসার সদস্য রয়েছেন ১ লাখ ৪০ হাজার ৬৬৯ আনসার সদস্য। এছাড়া অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা সদস্য মোতায়েন রয়েছে ৩২ জেলায়; সেখানে অতিরিক্ত বিজিবি ৩৩ প্লাটুন, অতিরিক্ত র্যাব টিম ১৮টি এবং অতিরিক্ত হাকিম ৬৩ জন দায়িত্ব পালন করছেন।
চার ধাপে উপজেলা ভোট
দেশের মোট ৪৯৫ উপজেলার মধ্যে নির্বাচন উপযোগী ৪৮৫ উপজেলায় চার ধাপে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোট হয়েছে গত ৮ মে। এসব উপজেলায় গড়ে প্রায় ৩৬ শতাংশ ভোট পড়েছিল। প্রথম ধাপে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৮ জন নির্বাচিত হন।
২১ মে দ্বিতীয় ধাপে ভোট পড়ে ৩৮ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা পার হয়েছেন ২২ জন। এছাড়া তৃতীয় ধাপে ১২ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী ৫ জুন চতুর্থ ধাপের ভোট রয়েছে।