পেকুয়ায় দুপক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ৬
কক্সবাজারের পেকুয়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্টেশনের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই শ্রমিকপক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কমপক্ষে ৬ জন। আহত হয়েছেন পথচারিসহ আরো ১৫-২০ জন শ্রমিক। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকেই ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তবে পুলিশ বলছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। শুক্রবার (২৮ জুন) বিকাল ৩টার দিকে পেকুয়া বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধরা হলেন— উপজেলার সদর ইউনিয়নের শেখেরকিল্লাঘোনা এলাকার বদিউল আলমের ছেলে আবদুল কুদ্দুস মনু (৪০), পূর্ব গোঁয়াখালী এলাকার গিয়াস উদ্দিন এর ছেলে নয়ন (২৩), আন্নর আলী মাতবর পাড়া এলাকার মৃত সিরাজ মিয়ার ছেলে নেজাম উদ্দিন (৪৫), একই এলাকার শওকত হোসেন (২২) ও মৃত মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে জিয়াবুল (১৮) এছাড়াও তাৎক্ষণিক কয়েকজনের নাম জানা যায়নি।
আহত হলেন— মিয়াপাড়া এলাকার নুরুল হোসেনের ছেলে মোজাম্মেল (৩০) ও পূর্ব গোঁয়াখালী এলাকার আনছার উদ্দিনের ছেলে আতিক আহমদ (২৪), বারবাকিয়া পূর্ব জালিয়াখালি মোহাম্মদ সেকান্দরের ছেলে মোক্তার আহমদ(২৬), আবুল বশরের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান(২৪), বারবাকিয়া ইউনিয়নের বুধামাঝির ঘোনা এলাকার আবুল হাশেমের ছেলে সাদ্দাম হোসেন(১৯), পশ্চিম বারবাকিয়া এলাকার আব্দুল মোতালেবের ছেলে জাহেদুল ইসলাম(২০), মোহাম্মদ নাজেম উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ রুবেল(১৯), শফিউল্লাহ ছেলে মোরশেদ(১৯), মোহাম্মদ আলমের ছেলে তাউসিফ(২১), আব্দুল মোনাফের ছেলে মোহাম্মদ রাজিব(২৪), আক্কাস উদ্দিনের ছেলে মিনহাজ(১৯), আলতাসের ছেলে বাবু(১৭) ও মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ হালু(২৫)।
জানা গেছে, সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক সংগঠন নিয়ে পেকুয়ায় দুটি গ্রুপের মধ্যে সম্প্রতি দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। আধিপত্য বিস্তার ও টিকিট কাউন্টার দখল-বেদখল নিয়ে মূলত তাদের এ বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই দুই সংগঠনের মধ্যে কক্সবাজার জেলা অটোরিকশা সিএনজিচালিত অটোটেম্পু সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি. নং ১৪৯১) এর পক্ষে দীর্ঘ এক যুগ ধরে নেতৃত্বে দিয়ে আসছিলেন নাছির উদ্দিন ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো.বারেক।
সম্প্রতি শ্রমিক নেতা মো.রফিক ও রফিকুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন মিলে বাংলাদেশ অটোরিক্সা সিএনজি শ্রমিক লীগ (রেজি নং২০৪৪) এর নামে পেকুয়ায় একটি কমিটি এনে সিএনজি শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। দুই রফিকের নেতৃত্বে শ্রমিকরা কিছুদিন আগে উপজেলার ৯টি টিকিট কাউন্টার দখল নেয়। শুক্রবার দুপুরে দুই রফিক কয়েকজন শ্রমিক ও সন্ত্রাসী নিয়ে ফাঁসিয়াখালী স্টেশনে টিকিট ও লাইনম্যান দিয়ে কাউন্টার দখল করতে গেলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় হামলা ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী শ্রমিকরা জানান, নাছির ও বারেকের নেতৃত্বে সিএনজি সংগঠন দখল করে দীর্ঘ দিন ধরে নিরীহ সিএনজি শ্রমিকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজী করে আসছে। এমনকি নতুন একটি সিএনজি লাইনে দিতে গেলে তাদেরকে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। তাদের এসব কর্মকাণ্ডে আমরা অনেক হয়রানির শিকার হয়েছি।
বাংলাদেশ অটোরিক্সা সিএনজি শ্রমিক লীগ পেকুয়ার সভাপতি মো.রফিক বলেন, ‘শ্রমিক পরিচয় দিয়ে একযুগ ধরে একটি সিন্ডিকেট চাঁদাবাজিতে মেতেছিল। তারা শ্রমিকের রক্ত চুষে খেয়েছে। কিছুদিন আগে প্রকৃত শ্রমিকরা তাদের বিতাড়িত করেছে। আজ সকালে ১০-১৫ জনের অস্ত্রধারী পেকুয়া বাজারে এসে লাইনম্যানদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে দুটি কাউন্টারে টোকেন দেওয়া শুরু করে। জুমার নামাজের পরে ফের বাজারে এসে তারা ত্রাস সৃষ্টি করে। এসময় শ্রমিকরা বাঁধা দিলে তাদের ওপর মামুনুর রশীদ, মির্জা বাহাদুর, হানিফ, হারুনসহ বেশ কয়েকজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি গুলি চালায়।’
অপরদিকে কক্সবাজার জেলা অটোরিকশা সিএনজি অটোটেম্পু সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের পেকুয়ার সভাপতি নাছির উদ্দীন বলেন, ‘সিএনজি কাউন্টার দখল করতে জয়নাল, হেলালসহ বেশ কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী আমার সিএনজি শ্রমিকদের ওপর অহেতুক গুলিবর্ষণ করে কাউন্টার দখল করতে চেষ্টা করে। তারা কোন শ্রমিক সংগঠনের কেউ নয় এবং তারা কোন শ্রমিকও নয়। সাধারণ সম্পাদক বারেক ভাই বর্তমানে ঢাকায় ব্যবসায়িক কাজে অবস্থান করছেন।’
এদিকে সৃষ্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাজার এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলি বর্ষণের ঘটনায় প্রায় তিন ঘণ্টা দোকানপাট বন্ধ ছিল। মানুষের মধ্যে আতংক ও ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। পরে পেকুয়া থানা পুলিশ ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, ‘আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। তদন্ত করে ঘটনার সাথে জড়িতদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।’