বন্দরের শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর নিয়োগ, অভিজ্ঞরাই হচ্ছেন অযোগ্য!
চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে আসা বিদেশি জাহাজের পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের জন্য অপারেটর তালিকাভুক্তি করতে দরপত্র আহ্বান করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে সেই দরপত্রে এমন সব শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে যার কারণে ওই কাজে অভিজ্ঞরাই অযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে। অন্যদিকে, বিতর্ক থাকার পরেও গতবছর ২৩ অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরের লাইসেন্সধারীরা ওই কাজে যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
ওই নতুন লাইসেন্স পাওয়ায় অনভিজ্ঞ শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরদের তালিকাভুক্তি করতেই শর্ত শিথিল করে দরপত্র আহ্বান করার অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে, জাহাজ থেকে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের কাজ চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়াও পায়রা ও মোংলা বন্দরেও হয়ে থাকে। ওই সব বন্দরের কাজ করা অভিজ্ঞ অপারেটরাও চট্টগ্রাম বন্দরে অযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে শুধুমাত্র টেন্ডারের শর্তের কারণে। তাই পায়রা বন্দর শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরস এসোসিয়েশন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। সম্প্রতি সংগঠনটির পক্ষ থেকে জাতীয় দৈনিকে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়ে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছেন।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়- ‘চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে আগত জাহাজের পণ্য হ্যান্ডলিং এর জন্য ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তৎকালীন চেয়ারম্যান তাঁর বদলি আদেশ জারি হওয়ার পর তড়িঘড়ি করে দরপত্র ব্যতীত নতুন ও অনভিজ্ঞ ২৩টি প্রতিষ্ঠানের বরাবরে চট্টগ্রাম বন্দরের রেগুলেশন ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন অগ্রাহ্য করে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর লাইসেন্স ইস্যু করেন।
ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ওই ২৩টি প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে কাজ করার সুবিধা প্রদানের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের রেগুলেশন ও আইন পরিবর্তন করে শুধুমাত্র ২৩টি প্রতিষ্ঠানই যাতে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারে সে লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ পূর্বক টেন্ডার আহ্বান করেছেন। কিন্তু সংশোধিত রেগুলেশন অনুযায়ী বাংলাদেশের যে কোন বন্দরে পণ্য/কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর অভিজ্ঞতা থাকলে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করা যাবে মর্মে উল্লেখ থাকা সত্তে¡ও উক্ত টেন্ডারে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোই টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এই শর্তের কারণে মংলা ও পায়রা বন্দরে কর্মরত কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে উক্ত টেন্ডারে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
অন্যদিকে পিপিআর অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানকে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর তালিকাভুক্তির কথা থাকলেও আহ্বানকৃত টেন্ডারে কোন অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়নি।
অতএব, চট্টগ্রাম বন্দরে বিরাজমান উৎপাদনশীলতা ও গতিশীলতা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরের শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর তালিকাভুক্তির দরপত্র জমা দেওয়ার সময় বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং এন্ড বার্থ অপারেটরস এসোসিয়েশন। চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানকে পাঠানো এক চিঠিতে দরপত্র জমার সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়। যদিও ওই দরপত্র জমার শেষ দিন ৪ জুলাই নির্ধারণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
সংগঠনটির দাবি, ঈদের ছুটিতে দীর্ঘ সময় অফিস বন্ধ থাকা এবং শিপ হ্যান্ডলিংয়ের কর্মরত অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরবে অবস্থান করছে। তারা না ফেরা পর্যন্ত ৪ জুলাইয়ের মধ্যে দরপত্র জমা দেওয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়া, বিভিন্ন আমদানিকারকগণ ও শিপিং এজেন্টদের কাছ থেকে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরদের প্রায় ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। এই বকেয়া পাওনা আদায়ের আগে নতুন করে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর তালিকাভুক্তি করলে পাওনা টাকা আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। ফলে শ্রমিকদের বেতন ভাতাও অনিশ্চিত হয়ে যাবে। তাই শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর নিয়োগের দরপত্র জমার সময় বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছে সংগঠনটি।