দেশজুড়ে

বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, প্লাবিত নিম্নাঞ্চল

উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বেড়ে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেইসঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গরীবুল্লাহ পাড়া, বারোঘরিয়া, গোবরধন, সদর উপজেলার কালমাটি এলাকার অন্তত সাত হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

শনিবার (২২ জুন) সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ২৮.৯০ মিটার (স্বাভাবিক ২৮.৭৫ মিটার)। যা বিপৎসীমার ১৫ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিতে গ্রামীণ রাস্তাঘাট, কৃষকের ধান, বাদাম, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। আর বাড়িঘরে পানি থাকায় খাওয়া ও ঘুমসহ সকল কাজে সৃষ্টি হয়েছে ভোগান্তি।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটির বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বলেন, গত তিনদিন ধরে বাড়িতে পানি থাকায় চুলা জ্বালাতে পারছি না। তাই খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছি। দিনে একবার রান্না করাই কষ্টকর। এছাড়া গৃহপালিত পশুর খাদ্য জোগানেও বেগ পেতে হচ্ছে।

একই এলাকার বাসিন্দা সহিদার রহমান বলেন, গত তিনদিন ধরে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানির ভয়ঙ্কর শব্দের রাতের ঘুম হারিয়ে যায়। গতরাতে তার প্রতিবেশীর বাড়ির একটি ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।

মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবরধন এলাকার বাসিন্দা জোবায়ের হোসেন বলেন, তিস্তার ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত করতে কতজন এসে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। এখন তিস্তায় পানি বাড়লেই আমাদের এলাকায় প্রবেশ করে। বাড়িঘর ও রাস্তায় পানি থাকায় চলাফেরাসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়।

এ উপজেলার বারোঘরিয়া ও গোবরধনসহ তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দি থাকা পরিবারের লোকজনের দাবি, নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে আসায় অল্প পানিতে বন্যা ও ভাঙনের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আর এই সমস্যা সমাধানে তিস্তা নদী খনন বা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন খুবই দরকার বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকেলে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায় তিস্তার ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১.৯১ মিটার। যা বিপৎসীমার মাত্র ২৪ সেন্টিমিটার নিচে (স্বাভাবিক ৫২.১৫ মিটার)। এর আগে সকাল ৬টায় ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২.০৫ মিটার। যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার রায় বলেন, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তাসহ লালমনিরহাটের সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে পানি দ্রুত নেমে যাবে।

তিনি আরো বলেন, নদীতে পলি পড়ে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে আাসায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পানি কমে গেলে কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিতে পারে। নদী ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *