চট্টগ্রামরাঙ্গুনিয়ারাজনীতি

ভোটারের নির্ভরতা হাছান মাহমুদে, প্রচারণায় আলো ছড়াচ্ছে মোমবাতি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ও বোয়ালখালীর শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৭ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত হেভিওয়েট প্রার্থী পর পর তিনবারের সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহমুদের সাথে ভোটের লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন বিভিন্ন দলের আরও পাঁচ প্রার্থী।

ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রচার-প্রচারণায় সরগরম হয়ে ওঠা এই নির্বাচনী আসনের মাঠে-ঘাটে, হাটে ও চায়ের দোকানে বইছে ভোটের আলাপ-আলোচনার ফুলঝুরি।

বিগত ১৫ বছরে পিছিয়ে পড়া রাঙ্গুনিয়াকে আধুনিক রাঙ্গুনিয়ায় পরিণত করতে প্রায় চার হাজার কোটি টাকারও বেশি উন্নয়ন কর্মকা- সম্পন্ন করেছেন বর্তমান সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ১নং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন সড়ক নির্মাণ ও প্রশস্তকরণ, ব্রিজ-কালভার্ট, নদী ভাঙনরোধে ব্লক স্থাপন, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় রাঙ্গুনিয়ার ইতিহাসে দল-মত নির্বিশেষে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পাঁচ হাজারের অধিক যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠা ও নিরলস পরিশ্রমের জন্য এসব উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।

ভোটের মাঠের সরব আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে এসব উন্নয়ন ও সহায়তার কথা। রাঙ্গুনিয়াবাসীর কাছে একজন নিরহংকারি ও সাদা মনের মানবিক মানুষ হিসেবে পরিচিত ড. হাছান মাহমুদকে বিগত সময়ে দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ কাছে পেয়েছেন যেকোন প্রয়োজনে। তিনি অন্যায়কারী ও সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেননি। দলের নাম ভাঙিয়ে অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে নিয়েছেন কঠোর ব্যবস্থা। নির্বাচনী এলাকার কোথাও অনিয়ম ও অন্যায়ের খবর নজরে এলেই সাথে সাথে ব্যবস্থা নিয়েছেন। ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এসব কারণেই চট্টগ্রাম-৭ নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের এবারও নির্ভরতার প্রতীক ড. হাছান মাহমুদের নৌকা। তবে এ পর্যন্ত সহাবস্থানে থাকা রাঙ্গুনিয়ায় ভোটের প্রচারণায় কোন সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এবং বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সংসদীয় এ আসনে মোট ভোটার ৩,১৩,০৯১। তন্মমধ্যে পুরুষ ভোটার ১,৬৫,১৫০ ও নারী ভোটার ১,৪৭,৯৪১। এ আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ১০৩টি। তন্মধ্যে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ৯৫টি ও বোয়ালখালীর শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নে ৮টি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই নেতার সাথে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ইসলামী ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মুহাম্মদ ইকবাল হাছান (মোমবাতি), জাতীয় পার্টির অঙ্গসংগঠন যুব সংহতি চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সাবেক সদস্য সচিব মুসা আহমেদ রানা (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপি থেকে মনোনীত প্রার্থী খোরশেদ আলম (সোনালী আঁশ), ইসলামিক ফ্রন্টের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সাধারণ সস্পাদক আহমদ রেজা (চেয়ার), সুপ্রিম পার্টি রাঙ্গুনিয়া উপজেলা শাখার কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক মোরশেদ আলম (একতারা)।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. হাছান মাহমুদকে জয়ী করতে দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে প্রতিদিন ভোটারের দুয়ারে দুয়ারে ভোট প্রার্থনা করছেন। অন্য পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে ইসলামী ফ্রন্টের মোমবাতি প্রতীকের প্রার্থী এডভোকেট ইকবাল হাছানের প্রচারণা চোখে পড়ার মতো। তিনি প্রতিদিন কোন না কোন এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

নৌকার প্রার্থীর পক্ষে জমজমাট প্রচারণার পাশাপাশি ভোটের মাঠে প্রচারণায় আলো ছড়াচ্ছে মোমবাতি। রাঙ্গুনিয়ার তৃণমূলে ইসলামী ফ্রন্ট ও ছাত্রসেনার রয়েছে শক্ত সাংগঠনিক ভিত। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক ভঙ্গুরতার মধ্যেও প্রার্থী মুসা আহমেদ রানা পোস্টার-ব্যানার ঝুলিয়ে প্রচারণায় অংশ নিলেও অনেকটা নিজের ঢোল নিজে পেটানোর অবস্থা। অপর তিন প্রার্থীর প্রচারণা তেমন চোখে না পড়লেও কিছু ব্যানার ও পোস্টার ঝুলিয়ে প্রার্থিতার জানান দিয়ে দায় সেরেছেন অনেকটা।

রাঙ্গুনিয়া সদর ইছাখালী বাজারের ব্যবসায়ী মো. শামসুদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে পিছিয়ে পড়া জনপদ রাঙ্গুনিয়াকে আলোকোজ্জ্বল জনপদে রূপান্তরে ১৫ বছর ধরে পরিশ্রম করে আসছেন হাছান মাহমুদ। আগে যারা রাঙ্গুনিয়া থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে সংসদে গিয়েছিলেন তাদের সাথে এলাকার সাধারণ মানুষের দেখা করতে ব্যক্তি বিশেষের প্রয়োজন হতো। সাধারণ মানুষ তাকে মোবাইলে পায়, মনের কথা খুলে বলতে পারে। ঢাকা-চট্টগ্রাম শহরের বাসা ও গ্রামের বাড়ি রাঙ্গুনিয়ার জনগণের জন্য সবসময় খোলা থাকে। রাঙ্গুনিয়ায় সকল ধর্মের ও মতের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চত করেছেন তিনি। দেশে ও প্রবাসে রাঙ্গুনিয়ার যেকোন ব্যক্তি বিপদে ও প্রয়োজনে পাশে পেয়েছেন।

রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মেয়র শাহজাহান সিকদার বলেন, বিগত ১৫ বছরে রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী অংশের এমন কোন খাত নেই যেখানে ড. হাছান মাহমুদের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। চার হাজার কোটি টাকার বেশি উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে গৃহহীনদের ঘর, সেলাই মেশিন, ট্রাক্টর, ঢেউটিন, মশারি, এম্বুলেন্স ও লাশবাহী ফ্রিজার গাড়ির ব্যবস্থা, দরিদ্রদের মাঝে ভ্যান, রিকশা ও ট্যাক্সি প্রদান, শীতবস্ত্র বিতরণ, অসহায় ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা, ২৮টি নতুন মসজিদ নির্মাণ, রাঙ্গুনিয়ার রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ, কৃষি উন্নয়নে রাবার ড্যাম স্থাপন, কর্ণফুলি নদী, ইছামতি ও শিলক খালের ভাঙনরোধে ব্লক স্থাপন, দেশের একমাত্র এভিয়ারি পার্ক ও ক্যাবলকার স্থাপনসহ বিভিন্ন প্রশংসনীয় উন্নয়ন কাজ করেছেন।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার বলেন, করোনা মহামারিতে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক প্রতিষ্ঠান এন এন কে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে রাঙ্গুনিয়ার অসহায় ও কর্মহীন মানুষের মাঝে প্রায় দুই কোটি টাকার ত্রাণ, খাদ্য, চিকিৎসা সামগ্রী ও নগদ অর্থ বিতরণ করেছেন হাছান মাহমুদ। প্রতি ঈদ ও পুজা-পার্বণে তিনি হাজার হাজার মানুষের ঘরে উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেন। রাঙ্গুনিয়ার এমন কোন মসজিদ মন্দির প্যাগোডা নেই, যা তার উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্মিত হয়েছে নতুন বিল্ডিং। ২০০৮ সালের পূর্বে যারা রাঙ্গুনিয়ার মানুষের ভোট নিয়ে সংসদে গেছেন তারা এসব করেননি। তাই দল-মত নির্বিশেষে সাধারণ ভোটারদের নির্ভরতার প্রতীক হাছান মাহমুদের নৌকা।

ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী এডভোকেট ইকবাল হাছান বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন আশ্বাস দিয়েছে ভোট হবে বাধাহীন ও উৎসবমুখর পরিবেশে। আমার দল সেই উৎসবের সারথি হতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। নির্বাচনে জয় পরাজয় দুটোই মেনে নিয়ে ভোটের মাঠে এসেছি। আশা করি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সেই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সকল প্রার্থী ও অংশীজন ভূমিকা রাখবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *