মিরসরাইয়ে বন্যায় মৎস্যখাতে ক্ষতি প্রায় সাত’শ কোটি টাকা
চট্টগ্রামের অন্যতম মিঠাপানির বাণিজ্যিক মাছ চাষের ক্ষেত্র মিরসরাইয়ে এবারের বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বানের জল নামার পর সরকারের মৎস্য বিভাগ ক্ষয়ক্ষতির তথ্য নিরূপণে মাঠে নেমেছে।
ব্যক্তি পর্যায়েও খামারিদের কাছ থেকে লিখিত তথ্য নিচ্ছে সরকার। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টা পর্যন্ত কাগজে-কলমে এ হিসেবে ৪শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেও মিরসরাই সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার দপ্তরের তথ্যমতে, সব তথ্য আসলে ক্ষতির পরিমাণ ৬শ কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যাবে।
তথ্য অনুযায়ী, মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়ন, ওচমানপুর ইউনিয়ন ও ধুম ইউনিয়নে প্রায় ১৫ হাজার একর পরিমাণ ঘেরে বাণিজ্যিকভাবে মিঠাপানির মাছ চাষ হয়। এছাড়া এখানে পোনা উৎপাদনে যুক্ত এমন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। একর প্রতি বছরে মাছ উৎপাদন হয় ক্ষেত্রভেদে ৭ থেকে ৮ টন। সে হিসেবে এখানে প্রতিবছর সর্বোচ্চ মাছ উৎপাদন হয় ১ লক্ষ ২০ হাজার মেট্রিক টন। কেজি প্রায় ২৩০ টাকা হারে যার বাজার মূল্য দাঁড়ায় ২ হাজার ৭শ ৬০ কোটি টাকা।
সরকারের মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, এখানকার উৎপাদিত মাছ চট্টগ্রামের মিঠা পানির মৎস্য খাদ্য চাহিদার ৭০ ভাগ পূরণ করে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার ধুম ইউনিয়নের আজিম মৎস্য খামার নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৩শ ৫ একর পরিমাণ ঘেরে চাষ করতো মিঠাপানির মাছ। বানের জল প্রতিষ্ঠানটির সবগুলো ঘেরের মাছ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ফেনী নদীর পাড়ে গড়ে তোলা এসব ঘেরএখন মাছশূন্য। পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে গুদামে রাখা কয়েক কোটি টাকা মূল্যের মৎস্য খাদ্য। ঋণের বোঝা, শ্রমিকের বেতন, পোনা আর ফিড মিলের বকেয়ার চাপে খামারের মালিক আজিম উদ্দিন এখন দিশেহারা। তিনি দাবি করছেন বন্যায় তার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
আজিম উদ্দিন বলেন, বলেন, ‘এখন আর ঘুরে দাঁড়ানোর মতো অবশিষ্ট কিছুই আমাদের কাছে নেই। এ জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।’এদিকে শুধুমাত্র আজিম উদ্দিনই নন। তার মতো এখানকার অসংখ্য মাছ চাষি সর্বগ্রাসী বন্যায় নিজেদের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম আর পুঁজি হারিয়ে পথে বসে গেছেন। মিরসরাইয়ের শীর্ষস্থানীয় মৎস্য চাষি, কামরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, আলি হায়দার টিপু, নুরুল আবছার, শাহ্ আলম, মফিজ কোম্পানি, ফরিদ, এরাদুল হক ভুট্টু, আজমল হোসেন, মেজবাহ মানিক, আবু সুফিয়ানসহ অসংখ্য উদ্যেক্তা প্রায় সাত’শ কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়েছেন। পাশাপাশি এখানকার মৎস্য খামারগুলোতে নিয়োজিত কয়েক হাজার শ্রমিক তাদের রুটি-রোজগার নিয়েও পড়েছেন বিপাকে।
এদিকে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টা পর্যন্ত সরকারি এ দপ্তর ৪শ ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে পেরেছে। তবে এটির পরিমাণ বেড়ে ৬শ কোটি টাকার বেশি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করেন মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার নাসিম আল মাহমুদ।তিনি পূর্বকোণকে বলেন, আমরা প্রান্তিক পর্যায়ে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছি। এখানকার মাছ চাষিরা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি কখনো হননি। তারা খুবই হতাশ। আমরা এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন ১৪শ ঘেরের তথ্য পেয়েছি। যার জমির পরিমাণ ১৫শ হেক্টর। বর্তমানে আমাদের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী ১৯ হাজার মেট্রিক টন মাছ বানের জলে ভেসে গেছে। এটি আরো ২৫ বা ৩০ পার্সেন্ট বাড়তে পারে।