চট্টগ্রাম

শহরে সবুজ থাকবে না!

১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে যাত্রার সময় চট্টগ্রাম পৌরসভার আয়তন ছিল ১০ দশমিক ০৯ বর্গমাইল। বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) আয়তন ১৬০ দশমিক ৯৯ বর্গকিলোমিটার। সরকারি হিসেবে দীর্ঘ এ ১৬০ বছরে শহরের জনসংখ্যা বেড়েছে ২০৮ গুণের বেশি। বিপরীতে দিন দিন এ শহরে কমেছে সবুজ। কমেছে উন্মুক্ত জায়গা। কমেছে মানুষের নিশ্বাস ফেলার স্থান।

চট্টগ্রাম এত পুরনো একটি শহর, অথচ এখানে নেই বড় আয়তনের কোনো উদ্যান। মাত্র ২ একর আয়তনের ছোট একটি উদ্যান আছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ ২ নম্বর গেট এলাকায়। ১৯৭৯ সালে ‘বিপ্লব উদ্যান’ নামে এর যাত্রা। নামের সঙ্গে ‘উদ্যান’ যুক্ত না থাকলে কেউ স্বীকারই করত না যে এটা উদ্যান। কারণ প্রকৃত অর্থে উদ্যানের যে বৈশিষ্ট্য তা হারিয়েছে এটি। উদ্যান মানে বাগান। এটি হবে সবুজ গাছপালায় শোভিত কোনো স্থান। যেখানে মানুষ যাবে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে। প্রাণভরে শ্বাস নিতে। ইট-পাথরের ঘিঞ্জি থেকে মুক্ত হয়ে সবুজ প্রকৃতির কাছে নিজেকে সঁপে দিতে। বিপ্লব উদ্যানে এখন সেই সবুজ নেই। আধুনিকায়নের নামে সবুজের সিংহভাগ গিলে খেয়েছে এটির রক্ষক চসিক। অবশিষ্ট যতটুকু আছে তাও ‘বিলীন’ করার আয়োজন করছে বলে চসিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন নগরবাসী। একইসঙ্গে নাগরিক স্বার্থ না দেখে বিপ্লব উদ্যানকে বাণিজ্যিকীকরণের আয়োজন চলছে কিনা সে প্রশ্নও তোলেন তারা।

বিপ্লব উদ্যানের সবুজ ধ্বংসের প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৮ সালে। ওই বছরের ১ নভেম্বর স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্টস লিমিটেড ও রিফর্ম লিমিটেড নামে বেসরকারি দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে চসিক। বিপ্লব উদ্যানের সৌন্দর্যবর্ধনের নামে করা ২০ বছর মেয়াদি ওই চুক্তির পর উদ্যানে গড়ে তোলে ইট-কংক্রিটের অবকাঠামো।

নগরবাসীর অভিযোগ, সৌন্দর্যবর্ধনের পরিবর্তে উল্টো সৌন্দর্যহানি ঘটে উদ্যানটির। এখানে প্রাধান্য পায় বাণিজ্য। পার্কে নির্মাণ করা ২০টি দোকান তার প্রমাণ। বিষয়টি নিয়ে তখন আপত্তি জানান নগরবাসী। যদিও তাতে কর্ণপাত করেনি চসিক। এ অবস্থায় গত ২২ আগস্ট নতুন করে চুক্তি করে চসিক। এবার অবশ্য রিফর্ম কনসোর্টিয়াম নামে কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে। প্রতিষ্ঠানটি কয়েকদিন আগে কাজও শুরু করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *