সংরক্ষিত নারী আসনের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীকে দিলেন স্বতন্ত্ররা
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬২টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। সংসদের বিধিবিধান অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১০ জনকে মনোনয়ন দিতে পারবেন। আর সেই সংরক্ষিত নারী আসনের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীকে অর্পণ করেছেন বলে জানিয়েছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে গণমাধ্যমের কাছে এসব কথা বলেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ কে আজাদ বলেন, আমরা যেহেতু নৌকা পাইনি, আমরা দলের বিভিন্ন পদে আছি, দায়িত্বে আছি। আবার আমরা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। আমরা বলেছি, এলাকাতে কাজ করতে নানা অসুবিধা হচ্ছে। সুতরাং দলের মধ্যে যেহেতু আছি সেহেতু আমাদের একত্রিত করা হোক।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, স্বতন্ত্র হিসেবেই তোমরা কাজ করো। এখানে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ এটা আমার ডান হাত, ওটা আমার বাম হাত। যারা দলীয় মনোনয়ন পায়নি, তারা সংসদে বেশি আলোচনা ও সমালোচনার সুযোগ পাবে।
সংরক্ষিত নারী আসনে স্বতন্ত্রদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে এ কে আজাদ বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলে এসেছি, যারা দীর্ঘদিন দলের জন্য কাজ করেছেন। যারা সংসদে জনগণের জন্য ভূমিকা রাখতে পারবেন এমন কাউকেই আপনি মনোনয়ন দেবেন। এটা আমরা নিজে থেকেই বলে এসেছি। যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজ আওয়ামী লীগ এখানে এসেছে, সেসব পরিবারকে স্বীকৃতিস্বরূপ সংরক্ষিত নারী আসন দিতে আমরা অনুরোধ করেছি।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা দলের সাংগঠনিক কাজে জড়িত থাকতে পারবে কি না– জবাবে এই সংসদ সদস্য বলেন, অবশ্যই তারা জড়িত থাকতে পারবেন। কারণ তারা সংগঠনের বিভিন্ন পদে দায়িত্বপালন করছেন। সুতরাং এটাতে কোনো বাধা নেই।
ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য খসরু চৌধুরী বলেন, এখানে যারা উপস্থিত ছিলেন প্রায় সবাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, আমাদের গায়ে যদি এখনো স্বতন্ত্রের সিল থাকে, তাহলে দলের পদে থেকে কাজ করতে আমাদের অসুবিধা হবে এবং এখনো হচ্ছে। মানুষ বিভিন্ন কথা বলছে। সেক্ষেত্রে আপনার (প্রধানমন্ত্রী) মতামত কী হবে?
প্রধানমন্ত্রী আপনাদের কী বার্তা দিয়েছেন– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবাইকে একই বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, দলীয় সংসদ সদস্যরা যতটুকু কথা বলতে পারবেন, তার চেয়ে আমরা বেশি কথা বলার সুযোগ পাব।
সংরক্ষিত নারী আসনের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে– এমন প্রশ্নের জবাবে খসরু চৌধুরী বলেন, এ ব্যাপারে আমরা নিজেরাই প্রধানমন্ত্রীর ওপর দায়িত্ব দিয়েছি। আমরা বলেছি, নেত্রী আপনি যেটা ভালো মনে করেন, সেটাই করবেন।
সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ বলেন, স্বতন্ত্ররা সবাই উপস্থিত হয়েছি এবং প্রধানমন্ত্রী সবার পরিচয় নিয়েছেন, সবার কথা শুনেছেন। ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সবাই মিলে আমরা দাবি করেছি, আমরা আওয়ামী লীগের লোক। আওয়ামী লীগেই থাকতে চাই। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে চলতে চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তোমরা আওয়ামী লীগের লোক, আওয়ামী লীগেই আছ। সুতরাং আমরা মনে করি, আমরা আওয়ামী লীগে যাচ্ছি এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সংসদে ভূমিকা পালন করব।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা সংরক্ষিত নারী আসনের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন– জবাবে তিনি বলেন, আমরা হয়ত ১০টি বা ১১টির মতো সংরক্ষিত নারী আসন পাব। সবাই একমত হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলে এসেছি, আমরা তাকে এটা দিয়ে এসেছি। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) তার মতো করে সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়ন দেবেন।
স্বতন্ত্ররা কোনো জোট করছে কি না– সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যারা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রয়েছি তারা আলাদা কোনো জোটে যাচ্ছি না।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৭ জানুয়ারি। দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন অনেক আওয়ামী লীগ নেতা। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হন। বিজয়ী ৬২ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ৫৯ জন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত, কেউ কেউ আবার পদধারী।
আগামী ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম সংসদ অধিবেশন বসবে। সংসদে বিরোধী দল হিসেবে থাকবে জাতীয় পার্টি। যা নিয়ে এরই মধ্যে সংসদ সচিবালয় থেকে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।