বিনোদন

হুমায়ুন ফরীদির মৃত্যুবার্ষিকী আজ

‘পাখি উড়ে যায়, পালক পড়ে রয়’। অভিনয়গুরু হুমায়ুন ফরীদি নেই, রয়ে গেছে তার স্মৃতি। মৃত্যুর পর তুমুল জনপ্রিয় এই তুখোড় অভিনেতা। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) তার মৃত্যুবার্ষিকী। এই কিংবদন্তি ২০১২ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন।

তিন দশকেরও বেশি সময় মঞ্চ, টেলিভিশন আর চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে রং ছড়িয়েছেন নন্দিত ও বরেণ্য এই অভিনেতা। হুমায়ুন ফরীদির দেহ বিদায় নিলেও তার স্মৃতি এখনও ভক্তদের চোখ অশ্রুসিক্ত করে।

১৯৫২ সালের ২৯মে ঢাকার নারিন্দায় জন্মেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। তার বাবার নাম এটিএম নুরুল ইসলাম, মায়ের নাম বেগম ফরীদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে ফরীদি ছিলেন দ্বিতীয়।

১৯৭০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেন চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে। একই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানিক কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হন স্নাতক করতে। পরের বছর ১৯৭১ সালে অংশ নেন মহান মুক্তিযুদ্ধে।

স্বাধীনতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক জীবন শুরু করেন হুমায়ুন ফরীদি। সেখানেই তার অভিনয় প্রতিভার বিকাশ ঘটে। সেলিম আল দীনের কাছে নাট্যতত্ত্বে দীক্ষা নেন তিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই সদস্যপদ পান ঢাকা থিয়েটারের। এই নাট্যদল থেকেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে তার অভিনয়ের রঙগুলো। ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নাট্য সম্পাদক।

ঢাকা থিয়েটারের ‘শকুন্তলা’, ‘মুনতাসীর ফ্যান্টাসি’, ‘কীর্তনখোলা’, ‘কেরামত মঙ্গল’র মতো মঞ্চনাটকে অভিনয় করে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সদস্য হিসেবে গ্রাম থিয়েটারের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।

১৯৮২ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘নীল নকশার সন্ধ্যায়’ ও ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’ নাটকে অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’কে কানকাটা রমজান চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যান।

হুমায়ুন ফরীদি অভিনীত নাটকের তালিকায় রয়েছে- ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’, ‘বকুলপুর কতদূর’, ‘দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা’, ‘একটি লাল শাড়ি’, ‘মহুয়ার মন’, ‘সাত আসমানের সিঁড়ি’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘অযাত্রা’, ‘পাথর সময়’, ‘দুই ভাই’, ‘শীতের পাখি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘তিনি একজন’, ‘চন্দ্রগ্রস্ত’, ‘কাছের মানুষ’, ‘মোহনা’, ‘শৃঙ্খল’, ‘প্রিয়জন নিবাস’। তার পরিচালিত সর্বশেষ নাটক ‘তখন হেমন্ত’ এবং অভিনীত ‘পূর্ণ চাঁদের অপূর্ণতায়’।

তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’ সিনেমার মধ্য দিয়ে হুমায়ুন ফরীদির বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে। নব্বই দশকে বাণিজ্যিক সিনেমার পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘সন্ত্রাস’, ‘দিনমজুর’, ‘বীরপুরুষ’ ও ‘লড়াকু’ সিনেমাতে নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এরপরেই দেশীয় চলচ্চিত্রে খল-নায়কের চরিত্রের হিসেবে তিনি নন্দিত হন।

শহীদুল ইসলাম খোকন ‘বিশ্বপ্রেমিক’, ‘অপহরণ’, ‘দুঃসাহস’সহ ২৮টি সিনেমার মধ্যে ২৫টিতেই রাখেন ফরীদিকে। এছাড়া হুমায়ুন ফরীদি ‘দহন’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘দূরত্ব’, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘অধিকার চাই’, ‘ত্যাগ’, ‘মায়ের মর্যাদা’, ‘মাতৃত্ব’ ও ‘আহা!’র মতো অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন।

আশির দশকের শুরুর দিকে মিনুকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফাকে ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিলেন ফরীদি। ২০০৮ সালে সেই সম্পর্কেরও বিচ্ছেদ ঘটে।

২০০৪ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন হুমায়ুন ফরীদি। নাট্যাঙ্গনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাকে সম্মাননা প্রদান করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *