চট্টগ্রাম

৫০ হাজারে শুরু, এখন ৪ কোটি টাকার চারটি প্রতিষ্ঠান সোহানীর

শখের বসে শেখা চিত্রকর্ম বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করেন। সেই ৫০ হাজার টাকা পুঁজি করে তিনজন কর্মী নিয়ে ২০১৩ সালে হুমায়রা মোস্তফা সোহানীর উদ্যোক্তা হওয়ার পথচলা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠা করেন অন্দরসজ্জার প্রতিষ্ঠান ‘সোহানী’স ইন্টেরিয়র’। মাত্র এক দশকে প্রতিষ্ঠান সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪টি, কর্মী সংখ্যা শতাধিক। ৫০ হাজার টাকায় শুরু করা ব্যবসা এখন প্রায় চার কোটি টাকায় পরিণত হয়েছে।

চট্টগ্রামের সফল এ নারী উদ্যোক্তা হুমায়রা মোস্তফা সোহানীর সাথে আলাপকালে এসব তথ্য জানা যায়। উচ্চশিক্ষা শেষ করে ভালো চাকরির অফার পেয়েও যোগ দেননি চাকরিতে। বরং স্বল্পপুঁজি আর নিজের মেধাকে অবলম্বন করে ছোট পরিসরে শুরু করেন ব্যবসা। এখন কেবল নিজেই সফল উদ্যোক্তা নন, বরং তার প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে আরও শতাধিক মানুষের। নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের গল্প বলতে গিয়ে সোহানী এন্ড কনসোসিয়েটস (এসএন্ডসি) গ্রুপ অব কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হুমায়রা মোস্তফা সোহানী বলেন, ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেই কিছু করবো। আমার স্বপ্নপূরণে সহযোগিতা করে ছাত্রজীবনে শখের বসে শেখা চিত্রকর্ম। সেই চিত্রকর্ম বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা আয় করি। সেই টাকা দিয়ে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করি অন্দরসজ্জার প্রতিষ্ঠান ‘সোহানী’স ইন্টেরিয়র’।

ব্যবসায়ী পরিবারে বেড়ে ওঠেন সোহানী। পারিবারিকভাবে তাঁতপণ্য ও পাটকলের ব্যবসা ছিল বাবার। দাদার বাড়ি নরসিংদীর আড়াইহাজারে হলেও বাবার ব্যবসায়িক সূত্রে থাকতেন চট্টগ্রামে। এখানেই জন্ম, বেড়ে ওঠেন এখানেই। ছোট থেকেই স্থপতি হওয়ার ইচ্ছা ছিল। সবসময় ঝোঁক ছিল নকশায়। তবে প্রথম বাধা আসে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষের পর।

সোহানী বলেন, আমার পরিবার ছিল খুবই রেস্ট্রিকটিভ। দূরের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে চায়নি। এজন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হই। তবে নকশা কিংবা আঁকাআঁকির বিষয়ে আগ্রহ এতটুকু কমেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় স্থাপত্য ও অন্দরসজ্জা নিয়ে ভারতের একটি বৃত্তি পাই। সেই সুযোগটি হাতছাড়া করিনি। তারপর থেকেই পড়াশোনা আর কাজকে সমানতালে চালিয়ে যাই।

এদিকে, চিত্রের আগ্রহ থেকে চিত্রশিল্পের ওপর দক্ষতা বাড়াতে থাকি। প্রশিক্ষণ থাকায় সেই সময়ে চারুকলার শিক্ষার্থী না হয়েও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্পকলা একাডেমিসহ কিছু জায়গায় অনুষ্ঠিত চিত্র প্রদর্শনীতে আমি অংশ নিই। এসব অনুষ্ঠানে চিত্রকর্ম বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয় হয়। পরে এই টাকাকেই আমার উদ্যোক্তা জীবনের প্রথম পুঁজি হিসেবে কাজে লাগাই।

সোহানী জানান, কর্মজীবনের হাতেখড়ি হয় চট্টগ্রামের একটি স্বনামধন্য স্থাপত্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠানে (আর্কিটেকচার ফার্ম) কাজের মাধ্যমে। এরপর ২০১২ সালে সামরিক বাহিনী একটি প্রকল্পের জন্য নকশা আহ্বান করলে তাতে অংশ নিই। তারা আমার উপস্থাপন করা নকশা পছন্দ করে। এরপরই ভাগ্যবদল শুরু। প্রথম কাজ শুরুর পর ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করি সোহানী’স ইন্টেরিয়র। প্রায় ৪৭ লাখ টাকার সেই প্রকল্পকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। করেছিও খুব যত্ন নিয়ে। আর ফলও মিলেছে। পরে নিয়মিত কাজের প্রস্তাব আসতে থাকে।

তিনি বলেন, উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে নারী হিসেবে যাত্রাটা মসৃণ ছিল না। তবে পরিবার আমাকে সম্পূর্ণ সহায়তা দিয়েছে। ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিধি বাড়ে। আগে একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান থাকলেও এখন কোম্পানির সংখ্যা চারটি। সোহানী এন্ড কনসোসিয়েটস (এসএন্ডসি) নামে গ্রুপ অব কোম্পানি করেছি।

অনেক বাধাবিপত্তি থাকলেও লক্ষ্য অর্জনে পিছপা না হওয়া এই উদ্যোক্তা ২০২১ সালে বর্ষসেরা মাইক্রো উদ্যোক্তা শ্রেণিতে জাতীয় এসএমই পুরস্কার বিজয়ী হন। নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত হার মানা যাবে না। আমি বিশ্বাস করি, প্রত্যেক সমস্যার মাঝেই সমাধান আছে। তাই সংকট তৈরি হলে ঘাবড়ে না গিয়ে ধৈর্য ধরে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *