অনিরাপদ-ঝুঁকিপূর্ণ পথচারীর ফুটপাত
পথচারীদের জন্য দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে নগরীর ফুটপাতগুলো। একদিকে ফুটপাত ও স্ল্যাব নির্মাণে ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী, অন্যদিকে অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে ফুটপাত। এসব ফুটপাত নির্মাণ বা মেরামতের সময় সংশ্লিষ্টদের কাউকে তদারকির জন্য স্পটে দেখা যায় না। কোথাও উঁচু কোথাও নিচু হওয়ায় নারী-শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য নগরীর ফুটপাতগুলো আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। অধিকাংশ ফুটপাত সড়ক থেকে দেড় থেকে দুই ফুট পর্যন্ত উঁচু। কোন কোন ফুটপাত মূল সড়ক থেকে তিন ফুট পর্যন্ত উঁচু। যেখানে উপেক্ষিত হচ্ছে ক্র্যাচ, সাদা ছড়ি ও হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী ব্যক্তি। এছাড়া, এসব ফুটপাত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ব্যবহার উপযোগী নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নগরীর জাকির হোসেন সড়কের জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ অফিস সংলগ্ন এলাকা থেকে খুলশী চার নম্বর সড়ক পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে সম্প্রতি ফুটপাত ও স্ল্যাবের নির্মাণ কাজ চলছে। এসময় দেখা যায়, সড়কের উভয় পাশে স্ল্যাব নির্মাণের কাজ চলছে। কোন কোন ফুটপাতের প্রস্ত কম, কোথাও আবার মূল সড়ক থেকে ফুটপাতের উচ্চতা অনেক বেশি। ফুটপাতের উপরে থাকা স্ল্যাবগুলোর আকার এক একটি এক এক রকম। নতুন করে যেসব স্ল্যাব বসানো হচ্ছে সেগুলো ফুটপাত থেকে আড়াই থেকে তিন ইঞ্চি পর্যন্ত উঁচু। কোথাও কোথাও দুই স্ল্যাবের মাঝে গ্যাপ রয়েছে, আবার অনেক জায়গায় গ্যাপ নেই। এখানে হাঁটতে গিয়ে যে কেউ যে কোনো সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফুটপাত নির্মাণে পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে নারী-শিশু ও বৃদ্ধদের পাশাপশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করা জরুরি। হাঁটার জন্য ফুটপাতকে দখলমুক্ত করতে হবে। যানজটমুক্ত শহর গড়ে তুলতেও ফুটপাতকে হাঁটা-চলার উপযোগী করা প্রয়োজন। তবে আমাদের দেশে ফুটপাত নির্মাণের পরিকল্পনা ও নকশায় বড় ধরনের ত্রুটি রয়েছে। ফুটপাতগুলোর কোথাও উঁচু, কোথাও আবার নিচু। এছাড়া ফুটপাত দখল করে নানা স্থাপনাও রয়েছে। এতে পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলাচল সম্ভব হয় না। এ সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন।
বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউট চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, ফুটপাতের ভুল নকশার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পথচারীদের। নগরীর বিশাল একটি অংশ যাতায়াত করে হেঁটে, ফুটপাত দিয়ে।
নগরীর কোনো অঞ্চলেই সঠিক পরিকল্পনায় ফুটপাত হয়নি। ফুটপাত যেকোনো শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর একটি। শুধু পথচারীদের হাঁটার সুবিধার্থেই নয়, বিভিন্ন সড়কের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনেও এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে আমাদের এসব ফুটপাত নির্মাণ বা মেরামতের সময় সংশ্লিষ্টদের কাউকে তদারকি করতেও দেখা যায় না।
তিনি আরো বলেন, আমাদের নগরীর বিভিন্ন ফুটপাতগুলো মূল সড়ক থেকে তিন ফুট পর্যন্ত উঁচু। নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় গোল পাহাড় থেকে প্রবর্তক পর্যন্ত ফুটপাতগুলো ধরে হেঁটে গেলে বুঝা যায়, আমাদের ফুটপাতগুলোর কী করুণ অবস্থা। কোথাও উঁচু, আবার কোথাও নিচু। যেখানে হাঁটতে গিয়ে যে কোন সময় যে কেউ দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে।
আমাদের শহরগুলোতে মসৃণ এবং ফাটলমুক্ত ফুটপাত খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ফুটপাতের এসব এবড়ো-থেবড়ো পৃষ্ঠ ধরে চলার সময় মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না; অনেকের তো পা-ই মচকে যায়।
জানতে চাইলে চসিকের নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আবদুল্লাহ আল ওমর বলেন, আমাদের অনেক ফুটপাতই বিভিন্ন কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্মাণ করা হয় না। এ কারণে হয়তো কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু স্ল্যাব নির্মাণ হচ্ছে।
বাণিজ্যিক অঞ্চলের ফুটপাতের জন্যও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পৃথক আদর্শমান রয়েছে। ইনস্টিটিউট ফর ট্রান্সপোর্টেশর এন্ড ডেভেলপমেন্ট পলিসির (আইটিডিপি) তথ্য অনুযায়ী, বাণিজ্যিক অঞ্চলে ফুটপাতের মূল অংশের (চলাচলের জন্য) প্রস্ত হবে ন্যূনতম ৮ দশমিক ২ ফুট। এর সঙ্গে ফ্রন্টেজ ও ফার্নিচার জোন যোগ করলে বাণিজ্যিক অঞ্চলে ফুটপাতের প্রস্ত হবে কমপক্ষে ১৬ দশমিক ৮ ফুট। অতিমাত্রায় বাণিজ্যিক অঞ্চলের জন্য ফুটপাতের মূল অংশের প্রস্ত হবে ১৩ দশমিক ১২ ফুট। ফ্রন্টেজ ও ফার্নিচারসহ এ ধরনের বাণিজ্যিক অঞ্চলে ফুটপাতের প্রস্ত হবে ন্যূনতম ২১ দশমিক ৩ ফুট।