অপরাধী ধরতে ওআইভিএস প্রযুক্তি নিয়ে ভোটের মাঠে র্যাব
আসন্ন ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্টুভাবে সম্পন্ন করতে স্টাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নেমেছে র্যাব। তাদের এই নিরাপত্তা কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে পরিচয় শনাক্তের প্রযুক্তি অনসাইট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম বা ওআইভিএস। নতুন এই প্রযুক্তি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে র্যাবের কার্যক্রমে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
র্যাব বলছে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ভোট কেন্দ্র ও তার আশপাশের এলাকায় অনুপ্রবেশকারী বহিরাগতদের পরিচয় সনাক্ত করতে র্যাবের মোবাইল টহল দল ডিভাইসটি ব্যবহার করবে। এ ছাড়া ডিভাইসটির মাধ্যমে এক এলাকার ভোটার অন্য এলাকায় প্রবেশ করে কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে কিনা তা সনাক্ত করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ আত্মগোপনে থাকা অপরাধীরা নির্বাচনের আগে ও পরের দুই দিন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওআইভিএস ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের সনাক্ত করে তাৎক্ষণিক তাদের পূর্বের অপরাধের তথ্য সংগ্রহ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট নিশ্চিত করতে এবারই প্রথমবারের মতো র্যাব ওআইভিএস ব্যবহার করছে। নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্ট করার লক্ষ্যে যারা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চেষ্টা করবে তৎক্ষণাৎ তাদের পরিচয় নিশ্চিত করাসহ ভোট কেন্দ্র ও তার আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরি করা সন্দেহজনক ব্যক্তিদের সনাক্তসহ ডিভাইসটির মাধ্যমে খুব সহজেই সহিংসতাকারীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ডিভাইসের মাধ্যমে শুধু অপরাধী সনাক্তই নয়, বিভিন্ন অজ্ঞাতনামা মৃতদেহের পরিচয়ও সনাক্ত করা হয়েছ। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে এই ডিভাইসের মাধ্যমে মানসিক প্রতিবন্ধী এবং অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির পরিচয় সনাক্ত করে তাদের পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ডিভাইসটি দিয়ে ঘটনাস্থল থেকেই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গার প্রিন্ট), জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা জন্ম তারিখ ব্যবহার করে জানা যাচ্ছে ব্যক্তির পরিচয়সহ অন্যান্য তথ্য।
র্যাবের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানান, অতি সম্প্রতি ফিঙ্গার প্রিন্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্ম তারিখ ছাড়াও এই প্রযুক্তিতে ছবি সংযোজন করা হবে। এতে করে কোনও ব্যক্তির পরিচয় সনাক্তে আরও সহজতর হবে। তদন্তের প্রয়োজনে র্যাব কোনও ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে বিষয়েও তথ্য থাকবে ডিভাইসটিতে। এ ছাড়া পাসপোর্ট, বিআরটিএ এবং পুলিশের ডাটাবেজের তথ্য সহায়তা ওআইভিএস ডিভাইসটির মাধ্যমে পাওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ডাটাবেজগুলোর তথ্য এই ডিভাইসের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব হবে।
জানা গেছে, আধুনিক এই ডিভাইসটি ব্যবহার করে ইতিমধ্যে ছদ্মবেশ ধারণ করে দীর্ঘদিন পলাতক থাকা ২০০৫ সালে বাগেরহাটের চাঞ্চল্যকর মনু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হেমায়েত কবিরাজ, কুড়িগ্রামে একই পরিবারের ৪ জনকে কুপিয়ে হত্যাসহ ৪টি হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জালাল গাজি, ১৯৯৩ সালে রাজধানীর কেরানীগঞ্জে পিতা-পুত্রকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আরিফ, ২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলে পুলিশ কনস্টেবল বাদল মিয়া হত্যাকাণ্ডের মূলপরিকল্পনাকারী ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রিপন নাথ ঘোষ, ২০০৬ সালে কেরানীগঞ্জের রোহিতপুর ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার আনোয়ার হোসেনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি কামাল উদ্দীনসহ দীর্ঘদিন ছদ্মবেশে পলাতক থাকা অসংখ্য অপরাধীদের আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গার প্রিন্ট) ব্যবহার করে তাদের পরিচয় সনাক্ত করা হয়। দীর্ঘদিন পলাতক মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামি বাউল মডেল সেলিম ফকির, বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যা, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডর রহস্য উন্মোচন ও বিভিন্ন মামলায় দীর্ঘদিনের ছদ্মবেশে পলাতক অপরাধীদের আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গার প্রিন্ট) ব্যবহার করে তাদের পরিচয় সনাক্ত করা হয়।