অবশেষে চবিতে ফিরছে জোবাইক, বরাদ্দ ১৭৫ সাইকেল
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আবারও চালু হতে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব বাইসাইকেল সেবা জোবাইক। স্বাস্থ্যকর এবং সাশ্রয়ী মূল্যের হওয়ায় অ্যাপভিত্তিক এই সেবাটি বর্তমানে তুমুল জনপ্রিয়। ক্যাম্পাসে সেবাটি ফিরছে দেখে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরাও। এবার সিকিউরিটি নিশ্চিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে যা জোবাইকের নিরাপত্তা আরো বেশি সমৃদ্ধ করবে। জোবাইক প্রাথমিকভাবে ৭৫টা সাইকেল দিবে ক্যাম্পাসে। পরে আরো ১০০টি সাইকেল যুক্ত হবে অর্থাৎ চবির জন্য ১৭৫টি সাইকেল বরাদ্দ রয়েছে। জানা যায়, গত ৬ জুন আবারও জোবাইক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।
মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জোবাইক ক্যাম্পাসে নিয়ে আসার জন্য সবচেয়ে বেশি ইচ্ছুক ছিলো। জোবাইকের এ সুবিধা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ব্যবহার করতে পারবে। বহিরাগত কোনো ব্যক্তি জোবাইকে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন না। জোবাইক এন্ড্রয়েড অ্যাপ নির্ভর বাইসাইকেল রাইডিং সার্ভিস। শিক্ষার্থী তার ফোনে থাকা জোবাইক অ্যাপসের মাধ্যমে সাইকেলের পেছনে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করে সাইকেল আনলক করে চালাতে পারবেন। অ্যাপস ব্যবহার শেষে পুনরায় সাইকেলটি লক করে রাখতে পারবেন এবং অন্য শিক্ষার্থী এসে আবারও একই পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে পারবেন। মোবাইল রিচার্জের মতো অ্যাপে টাকা রিচার্জ করতে হবে এবং শিক্ষার্থী যতটুকু সাইকেল ব্যবহার করেছে ততটুকু অর্থ কেটে নেওয়া হবে।
জোবাইক চালু হওয়া নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গিয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। সম্প্রতি ১ টাকা করে সিএনজি অটোরিকশায় ভাড়া বাড়ানো নিয়ে ক্ষোভ ছিলো শিক্ষার্থীদের। জোবাইক আসলে অতিরিক্ত ভাড়া ব্যয় এবং ভোগান্তি থেকে বাঁচবে শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া বায়োলজি ফ্যাকাল্টি, সেন্ট্রাল ফিল্ড ও ফরেস্ট্রির মতো দূরবর্তী জায়গা যেখানে রিকশা পাওয়া যায় না, সেখানে সহজেই জো বাইকের সুবিধা নিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে চবিতে যাত্রা শুরু করে জোবাইক। তবে তখন জোবাইক প্রচুরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। এরমধ্যে সাইকেল ভেঙে ফেলা, পাহাড়ে বা রুমে নিয়ে যাওয়া, ড্রেনে ফেলে রাখা উল্লেখযোগ্য। যার কারণে সেবাটি সাময়িক বন্ধ করে সাইকেলগুলো মেরামতে পাঠানো হয়েছিলো। এক অথবা দুই সপ্তাহ পর ক্যাম্পাসে আবার ফেরত আসার কথা থাকলেও এর পরপরই কোভিড চলে আসে। যার কারণে জোবাইক তাদের সকল ধরনের অপারেশন বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশে। কিন্তু এবার এসব সমাধানে জোবাইক তাদের জিপিএস সিস্টেমকে আরো বেশি শক্তিশালী করেছে এবং ডিভাইসে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ফিচার এড করছে। এর মাধ্যমে জোবাইক কতৃপক্ষ সহজেই বুঝতে পারবে সাইকেলকে তার নিজস্ব লোকেশনের বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বা রুমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পূর্বের জিপিএস দুর্বল হওয়ায় সাইকেল ট্রেক করা কষ্ট ছিলো।
পাশাপাশি গতবার ক্যাম্পাসে জোবাইক স্থানীয় রিকশাওয়ালা বা সিএনজিওয়ালাদের আক্রোশের শিকার হয়েছিলো। যাত্রী কম পাবে চিন্তা করে অনেক চালকরা ইচ্ছাকৃতভাবে জোবাইককে নষ্ট করে ফেলে। এবার এমন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শক্ত নজরদারির আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।
জোবাইক ফেরা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে আইন অনুষদের ইমাদ ওয়াসিম বলেন, হল থেকে ফ্যাকাল্টি যেতে রিকশায় ১৫ টাকা ভাড়া লাগে। আর সিএনজিতে ৭ টাকা। কিন্তু সিএনজি প্রায় সময় পাওয়া যায় না। জোবাইকে আসলে এই সমস্যার সমাধান হবে। প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা আশাকরি আন্তরিক হবে যাতে আগের মতো ঝামেলা না হয়।
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম জানান, জোবাইক ভাড়ার নৈরাজ্য থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাবে। তাছাড়া এটি যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে পাওয়া যায় যা আমাদের জন্য সহায়ক।
জোবাইকের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এম্বাসেডর তাহলিল সাকিফ বলেন, জোবাইক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সম্পদ। এটি চবিতে শিক্ষার্থীদের নিত্যদিনের কার্যক্রমকে সহজ করার একটি মাধ্যম হিসেবে ক্যাম্পাসে আসছে। তাই এই জোবাইক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের সবার। জোবাইকের ক্যাম্পাস এম্বাসাডর হিসেবে আমি চবির সকল শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করব জোবাইককে নিজের এবং ক্যাম্পাসের সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করবেন।