বিনোদন

অমি নয়, বিজ্ঞাপনটি নির্মাণ করেছেন অভিনেতা জীবন নিজেই!

কোকাকোলা বাংলাদেশের একটি বিজ্ঞাপন নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ বিজ্ঞাপনটিতে মডেল হিসেবে ছিলেন অভিনেতা শরাফ আহমেদ জীবন, শিমুল শর্মা, আব্দুল্লাহ আল সেন্টুসহ আরও অনেকে।

নেটিজেনদের তোপের মুখে পড়ে কোকাকোলা বিজ্ঞাপন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও মঙ্গলবার (১১ জুন) বিকেলেও টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতে চলতে দেখা গেছে।

এদিকে বিশ্বস্ত সূত্রের খবরে জানা গেছে, পরিচালক অমি নয়, কোকাকোলা বিজ্ঞাপন নির্মাণ করছেন অভিনেতা জীবন নিজেই! সূত্রটি জানায়, কোকাকোলার বিজ্ঞাপন শুটিং করা হয়েছে এফডিসিতে। এই বিজ্ঞাপনের আইডিয়া আর মার্কেটিং নিয়ে তিনি আগেই জানতেন বিজ্ঞাপনটি সমালোচনার স্বীকার হবেন এবং ভাইরাল হবে। জীবন যেহেতু অভিনেতার পাশাপাশি একজন নির্মাতা হয়তো এমন আইডিয়া নিজেই ক্রিয়েট করেছিলেন।

সূত্রটি আরও জানায়, বিজ্ঞাপনটি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি একাধিক পরিচালকের সঙ্গে কথা বললে অনেকে তা নির্মাণ করতে রাজি হননি।

শুধু তাই নয়, এই অভিনেতাকে বিভিন্ন নাটকে অশ্লীল ডায়লগ বেশি দিতে দেখা গেছে। পরিচালকের এক নাটকে তার মুখে পরিচিত ডায়লগের মধ্যে “হালায় কামডা করছে কি?”। নাটকের বাইরেও তাকে নিয়ে নানান সময়ে আলোচনা-সমালোচনা হতে দেখা গেছে।

এদিকে বিজ্ঞাপনের সঙ্গে জড়িত অনেকেই ক্ষমা চাইলেও একটি বিতর্কিত বিজ্ঞাপন নির্মাণের পরও বিষয়টিকে তোয়াক্কা করছেন না শরাফ আহমেদ জীবন। গণমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলতে চাইছেন না। বন্ধ করে রেখেছেন নিজের মুঠোফোন।

তবে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে জীবন লিখেছেন, আমি একজন নির্মাতা এবং অভিনেতা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। বিগত দুই দশক ধরে আমি নির্মাণ ও অভিনয়ের সাথে জড়িত। সম্প্রতি কোকা-কোলা বাংলাদেশ আমার সাথে তাদের একটি বিজ্ঞাপন নির্মাণ এবং অভিনয় করার জন্য নিয়োগ করেছিলো। আমি শুধুমাত্র তাদের দেয়া তথ্য ও উপাত্তই কাজটিতে তুলে ধরেছি।

তিনি লিখেন, বিজ্ঞাপনটি প্রচার হওয়ার পর থেকে আমি আপনাদের অনেক মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করছি এবং আপনাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি আবারো বলতে চাই কাজটি শুধুই আমার পেশাগত জীবনের একটি অংশমাত্র। ব্যক্তিগত জীবনে আমি সবসময় মানবাধিকার বিরোধী যেকোনো আগ্রাসনের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছি এবং আপনাদের অনুভূতি ও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেছি।

বিজ্ঞাপন করার মাধ্যমে ইসরায়েলের পক্ষ নেওয়া হয়েছে, এমনটা মনে করেন না এ অভিনেতা। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, এখানে আমি কোথাও ইসরায়েলের পক্ষ নেইনি এবং আমি কখনোই ইসরায়েলের পক্ষে নই। আমার হৃদয় সবসময় ন্যায়ের পক্ষে এবং মানবতার পাশে আছে, থাকবে।

বিজ্ঞাপনটিতে জীবন ও শিমুল শর্মাকে দেখে অনেক নেটিজেন মনে করছেন এটি পরিচালনা করেছেন কাজল আরেফিন অমি। কারণ এই নির্মাতার বেশির ভাগ নির্মাণে এই অভিনয়শিল্পীদের দেখা যায়। সমালোচনার আঁচ পেয়ে ফেসবুকে নিজ থেকেই অবস্থান পরিষ্কার করেছেন অমি। অমি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমি কখনো বিজ্ঞাপন বানাই নাই। আমি নাটক, ওয়েব ফিল্ম, ওয়েব সিরিজ নিয়েই কাজ করেছি, ভবিষ্যতে সিনেমা বানাব।’

সবার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই পরিবারের একজন ভুল করলে সেই পরিবারের অন্য সদস্যদের শাস্তি দিবেন না। আমরা যারা একসাথে কাজ করি আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য বলে আমি মনে করি। আমাদের পরিবারের কেউ যদি ভুল করে থাকে, সে তার ভুল বুঝতে পারে এবং সে যদি ক্ষমাপ্রার্থী হয়, অবশ্যই আমরা চাইবো তাকে যেন দেশবাসী এবং সাধারণ মানুষ ক্ষমা করে দেয়।’

বিজ্ঞাপনটির প্রসঙ্গ টেনে অমি আরও লিখেন, ‘একটি বিজ্ঞাপনের সাথে সম্পৃক্ততা থাকে এজেন্সির, কোম্পানির এবং বিজ্ঞাপন নির্মাতার। গতকাল থেকে যে বিজ্ঞাপনের ইস্যুটি নিয়ে আমার দর্শক, আমার পরিবার ও দেশবাসী বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, আমি সবার কাছে একটি বিষয় পরিষ্কার করতে চাই যে উক্ত বিজ্ঞাপনের সাথে আমি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নই। আপনারা আমার উপর রাগ করছেন, আবেগ আপ্লুত হচ্ছেন। আমি আপনাদের সকল রাগ-অভিমান মাথা পেতে নিচ্ছি। কারণ, বিজ্ঞাপনটির অভিনয়শিল্পী যারা আছেন তারা আমার সাথে অনেকদিন ধরেই কাজ করছেন।

আপনারা অনেকেই হয়তো এই অভিনয়শিল্পীদের আমার পরিচালিত কাজের মাধ্যমে চেনেন। কিন্তু আমি শুধুমাত্রই এই অভিনয়শিল্পীদের পরিচালক, তাদের অভিভাবক নই। তারা ব্যক্তিগত জীবনে কি করবে, তা সম্পূর্ণই তাদের নিজস্ব ব্যাপার, আমার তাতে কোন হস্তক্ষেপ নেই। আমি একজন পরিচালক। কোন অভিনেতা- অভিনেত্রী যখন আমার প্রজেক্টে কাজ করতে আসে আমি শুধুমাত্র তাদের ডিরেকশন দেই। তাদের ব্যাক্তিগত জীবন, তাদের কাজ, তাদের পথ চলা- এর কোন কিছুর সাথেই আমার কোন ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। অবশ্যই তারা আমার টিম মেম্বার কিন্তু সেটা শুধুমাত্র যখন তারা আমার কাজ করবে তখন। এর বাইরে তাদের ব্যাক্তিগত জীবন আছে।’

মানবতা ও বিবেক এ দুটি বিষয় একজন মানুষকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। আমি সব সময় চেষ্টা করি আমার কাজের মাধ্যমে মানবতা এবং বিবেককে জাগ্রত রাখতে—এমনটা জানিয়ে তাকে ভুল বুঝা থেকে বিরত থাকা এবং তার পরিশ্রমকে বিফলে না যেতে দেওয়ার অনুরোধ জানান কাজল আরেফিন অমি। সবশেষে এই নির্মাতা বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে মিডিয়াতে আমার পথচলা। এই ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে আমি সবসময় চেষ্টা করেছি আমার দর্শকদের বিনোদন দেয়ার উদ্দেশ্যে কাজ করতে।

আমার সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতেও গল্প এবং শিল্পী নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমি আমার দর্শকদের চাহিদা সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করবো। আশা করছি আপনারা কেউ আমাকে ভুল বুঝবেন না এবং আমার পরিশ্রমকে বিফলে যেতে দিবেন না। সকলের কাছে অনুরোধ, আমার কাজে কোনো অভিনয়শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবন খুঁজবেন না। আমি কারও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কাজ করি না। আমি আমার গল্পের চরিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি, যে চরিত্রগুলো আমাদের সমাজের প্রতিচ্ছবি।আমাদের পাশে থাকবেন, ধন্যবাদ।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *