চট্টগ্রামবিনোদন

‘অ জেডা ফইরার বাপ’ খ্যাত সৈয়দ মহিউদ্দিন আর নেই

‘অ জেডা ফইরার বাপ’ খ্যাত চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের খ্যাতনামা গীতিকার ও সুরকার সৈয়দ মহিউদ্দিন মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি মহি আল ভান্ডারী নামেও পরিচিত ছিলেন।

রবিবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।

এদিন বাদ জোহর কাতালগঞ্জের কাতালপির মসজিদে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ফটিকছড়ির সুয়াবিল গ্রামে তাকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগীতশিল্পী ও তার ছাত্র আলাউদ্দিন তাহের।

সৈয়দ মহিউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। ২০১৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ডিসি হিলে এক অনুষ্ঠানে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেদিন মঞ্চত্যাগ করার সময় পা পিছলে পড়ে গিয়ে বাম হাত ও বাম পা ভেঙে ফেলেন। তার পর থেকেই শুরু রোগভোগের দিন। গত ১৩ মার্চ স্ট্রোক করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন এই শিল্পী। এরপর তিন দফা স্ট্রোক করেন।

লোকগীতি গবেষক ও সাংবাদিক নাসির উদ্দিন হায়দার জানান, সৈয়দ মহিউদ্দিন চিরকুমার ছিলেন। আজীবন সংগীত সাধনা করেছেন। থাকতেন শুলকবহর মির্জাপুলের বাসায়।

১৯৪৪ সালে ফটিকছড়ির সুয়াবিল ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ মহিউদ্দিন। তার পিতা সৈয়দ আমির হোসেন এবং মাতা সৈয়দা আনোয়ারা বেগম।

গানের মাধ্যমে সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। গ্রামে বসবাসকালীন অধ্যক্ষ হেম মজুমদারের কাছে সংগীত চর্চা শুরু করেন। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত কুমিল্লায় ওস্তাদ সুরেন দাশের কাছে তিনি শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নেন। দেশ হানাদার মুক্ত হলে গান রচনা ও সুর চর্চায় মনোনিবেশ করেন।

১৯৮০-এর দশকে বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রে গীতিকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন সৈয়দ মহিউদ্দিন। আধুনিক গান রচনার পাশাপাশি তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও মাইজভাণ্ডারী গান রচনায় হাত দেন। সহস্রাধিক মাইজভান্ডারী, আঞ্চলিক, আধুনিক ও রাগসংগীতের রচয়িতা তিনি।

১৯৭৮ সালে দৈনিক আমার বাংলা পত্রিকায় যোগ দেন সৈয়দ মহিউদ্দিন। সে সময় ঢাকায় একবছর কাজ করেছিলেন। এরপর দেশের প্রথম সংগীত পত্রিকা মাসিক সংগীতের সঙ্গে জড়িত হন। পত্রিকাটির চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন তিন বছর।

তার লিখিত কালজয়ী গানের মধ্যে—‘অ জেডা ফইরার বাপ’, ‘মেজ্জান দিয়ে দিয়ে’, ‘আহ্ হায় রে গরু টানের গরু গাড়ি’, ‘মন কাচারা মাঝি তোর সাম্পানত উইটতাম নঅ’, ‘তালাকনামা পাঠাই দিলাম চিঠির ভিতরে’, আসকার ডিঁইর পুকপাড়ে আঁর ভাঙাচোরা ঘর’, ‘তালাকনামা পাঠাই দিলাম চিঠির ভিতরে’ প্রভৃতি উল্লেখ্যযোগ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *