চট্টগ্রাম

আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়: বিভাগীয় কমিশনার

আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয় মন্তব্য করে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেছেন, মাদক একটি বড় সমস্যা। মাদকের ছোবল থেকে আমাদের শিশু-কিশোর ও যুবসমাজকে রক্ষা করতে হবে।

হেরোইন, ইয়ারা ও ফেনসিডিলসহ যারা মাদক নিয়ে আটক হয় তাদের মধ্যে কেউ মামলা থেকে খালাস পায়, আবার কারও কারও নির্দিষ্ট মেয়াদে সাজা হয়। মাদক মামলার রায়ে যে সব আসামির ৫ থেকে ৭ বছর সাজা হয়, আপিলের পরও তাদের সাজা যাতে বহাল থাকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

কাস্টমস অ্যাক্ট আইন ও ফৌজদারি আইনের মামলাগুলোর কার্যক্রম বাস্তবায়ন কতটুকু তা প্রতিমাসে প্রতিবেদন আকারে জানাতে হবে।

১৮ বছরের নিচে যে সব শিশু-কিশোর ড্যান্ডি (মিথাইল মেথাক্রাইলেট) ও মাদক সেবন করে তাদের বিচারের জন্য আলাদা শিশু আদালত রয়েছে। তাদের সংশোধনের জন্য সমাজসেবার সহযোগিতায় গাজীপুরে শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সোমবার (২৪ জুন) সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে চোরাচালান নিরোধ আঞ্চলিক টাস্কফোর্স সভা, বিভাগীয় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা, বিভাগীয় বিনিয়োগ উন্নয়ন সহায়তা কমিটির সভা, বিভাগীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন টাস্কফোর্স সভা, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সমন্বয় সভা, বিভাগীয় রাজস্ব সম্মেলন ও জেলা প্রশাসকদের মাসিক সমন্বয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও বিভাগের জেলা প্রশাসকদের মধ্যে ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি ২০২৪-২৫’ স্বাক্ষরিত হয়। বিগত সভার কার্যক্রম ও অগ্রগতি তুলে ধরেন বিভাগীয় কমিশনারের একান্ত সচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম অনীক চৌধুরী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফখরুল ইসলাম।

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ইভটিজিং, খুন ও ধর্ষণের ঘটনা অনেকটা কমেছে। ইতোপূর্বে কিশোর গ্যাংয়ের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে আসা মাদক, অস্ত্রের চোরাচালান, তেল পাচার রোধ ও চোরাচালান রোধে সড়ক পথের পাশাপাশি নৌপথে টহল আরও জোরদার করতে পুলিশ, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও নৌ-পুলিশসহসংশ্লিষ্ট সংস্থাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটতে পারবে না। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর তদারকি বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে রিসোর্ট ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোর প্রতিও নজর রাখতে হবে।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরেআলম মিনা বলেন, সম্মিলিত উদ্যোগের কারণে বিভাগের প্রতিটি জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে মাদক সেবন ও উদ্ধারের পর পুলিশ বাদী হয়ে যে সকল মামলা দায়ের করা হয় সেগুলোর রায়ের সাজা ও আপিলের বিষয়টি তদারকি করার জন্য পুলিশের আলাদা একটি ইউনিট রয়েছে। এ বিভাগে ৮০ শতাংশ আসামির সাজা হয় মাদকের মামলায় আর অন্যান্য বাদীর মামলায় সাজা হয় ২০ শতাংশ আসামির।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো আটক করে রাখার জন্য জেলা ও হাইওয়েতে ডাম্পিং স্টেশন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

পণ্য পরিবহন নেতা গোলাম মোস্তফার অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, চাঁদাবাজ বা পুলিশের সোর্স যেই হোক, প্রমাণ ও অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বায়েজিদ থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, এখানকার খাস জমিতে জেলা ও হাইওয়ে পুলিশের আটক গাড়িগুলো রাখার জন্য ডাম্পিং স্টেশন করা যায় কি না সে ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে চিঠি দিয়ে জানাব। পাশাপাশি মেট্রোপলিটন এলাকায় আটক গাড়িগুলো রাখার জন্য ডাম্পিং স্টেশন চেয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যানকে অবগত করা হবে।

বক্তব্য দেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরেআলম মিনা, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবদুল মান্নান মিয়া, বিজিবির চট্টগ্রাম রিজিয়নের পরিচালক (লজিস্টিক) লে. কর্নেল মো. শরীফ উল্লাহ, বিডার পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হোসাইন, নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান (চট্টগ্রাম), শাহীন ইমরান (কক্সবাজার), মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন (রাঙামাটি), মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), সুরাইয়া জাহান (লক্ষ্মীপুর), খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান (কুমিল্লা), মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার (ফেনী), মো. কামরুল হাসান (চাঁদপুর), মো. সহিদুজ্জামান (খাগড়াছড়ি), শাহ মোজাহিদ উদ্দিন (বান্দরবান), শারমিন আক্তার (নোয়াখালী), রেলওয়ে পুলিশ সুপার মো. হাছান চৌধুরী, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক জাহিদ হোসেন মোল্লা, চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের পিপি হরিপদ চক্রবর্তী, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাটের উপ-কমিশনার (কুমিল্লা) মো. কেফায়েত উল্লাহ মজুমদার, যুগ্ম কমিশনার (চট্টগ্রাম) মো. মারুফুর রহমান, সহকারী পরিচালক আবদুল মতিন তালুকদার, পণ্য পরিবহন মালিক গ্রুপের সদস্য গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *