আইপিএলে তাণ্ডব চালিয়ে বিশ্বকাপ দলে ম্যাকগার্ক
শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দলের সঙ্গী হচ্ছেন জেইক ফ্রেজার ম্যাকগার্ক। ১৫ জনের মূল স্কোয়াডের অংশ হয়ে অবশ্য নয়। দলে এখনও পরিবর্তন আনার সুযোগ থাকলেও কাউকে বাদ দিয়ে তাকে অন্তর্ভুক্ত করার পথ বেছে নেননি নির্বাচকরা।
তবে অতিরিক্তি হিসেবে দলের সঙ্গে রাখা হবে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের সাম্প্রতিক এই ব্যাটিং সেনসেশনকে। তার পাশাপাশি ভ্রমণসঙ্গী অতিরিক্ত হিসেবে বিশ্বকাপে থাকছেন আগ্রাসী অলরাউন্ডার মাথু শর্টও।
প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলি আগে বলেছিলেন, অতিরিক্ত হিসেবে কেবল একজনকে রাখা হবে দলের সঙ্গে। সেই একজন হিসেবে চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল শর্টের নাম। কিন্তু আইপিএলে ফ্রেজার-ম্যাকগার্কের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের পর তাকেও রাখতে বাধ্য হলেন নির্বাচকরা।
বিশ্বকাপ চলার সময় কোনো ক্রিকেটার চোটে পড়লে এই দুজনের মধ্য থেকে একজনকে নেওয়া হবে। দলের নিয়মিত অনুশীলনেও থাকবেন দুজন।
এবারের আইপিএলে শুরুর দিকে সুযোগ না পেলেও পরে মাঠে নেমেই ঝড় তোলেন ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক। দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে অভিষেকেই ফিফটির পর দ্রুতই টুর্নামেন্টের আলোচিত নামগুলোর একটি হয়ে ওঠেন তিনি। ২২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান আসর শেষ করেন ৯ ইনিংসে ৪ ফিফটিতে ৩৬.৬৬ গড়ে ৩৩০ রান করে। স্ট্রাইক রেট ২৩০.০৪, টুর্নামেন্টে অন্তত একশ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যা সর্বোচ্চ।
গত অক্টোবরে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ২৯ বলে সেঞ্চুরি করে স্বীকৃত ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড গড়ার পর থেকেই তার ব্যাটের তেজ টের পাচ্ছে ক্রিকেট বিশ্ব। ওই ইনিংসের পরপর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও প্রথম শতরান পেয়ে যান দ্রুততায়। পরে বিগ ব্যাশে দুর্দান্ত পারফর্ম করেন। দেশের বাইরের লিগে অভিষেকে ফিফটি করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইএল টি-টোয়েন্টিতে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওয়ানডে অভিষেক হয়ে যায় গত ফেব্রুয়ারিতে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেন ১৮ বলে ৪৩ রানের ইনিংস।
এরপর চোট পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার লুঙ্গি এনগিডির বদলি হিসেবে দিল্লির হয়ে আইপিএলে সুযোগ পেয়েই বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে নিজেকে চেনান আলাদা করে।
অস্ট্রেলিয়ার ১৫ জনের বিশ্বকাপ দল ঘোষণার সময়ও ফ্রেজার ম্যাকগার্ককে নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছিল বলে তখন জানিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলি। এসইএন রেডিওর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি আবারও তুলে ধরলেন ২২ বছর এই বয়সী ব্যাটসম্যানকে মূল দলে রাখতে না পারার কারণ।
“কোনো সংশয় নেই যে, সে আমাদেরকে অভিভূত করেছে। ১৫ জন চূড়ান্ত করার সময়েও তাকে নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। সে অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটছিল এবং কোনো সন্দেহ নেই যে, ভবিষ্যতেও ছুটবে।”
“আইপিএলে সে যা করেছে, যেভাবে জ্বলে উঠেছে… অসাধারণ এক প্রতিভা সে এবং দেশজুড়ে সমর্থকদের অনেক আনন্দের উৎস হয়ে উঠবে সে। তবে ১৫ জনের দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের ভাবনায় ছিল, যেভাবে আমরা খেলতে চাই, সেই পথে যেন সবগুলো দিক আমরা পূরণ করতে পারি এবং সেই চেষ্টায় অনেক দিন ধরেই দলটাকে অনেকভাবে গড়ে তোলা হচ্ছিল।”
অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডারে ডেভিড ওয়ার্নার, ট্রাভিস হেড ও অধিনায়ক মিচেল মার্শ থাকায় সেখানে মূলত জায়গা ফাঁকা নেই। মিডল অর্ডারে মার্কাস স্টয়নিস ও ক্যামেরন গ্রিনের মতো অলরাউন্ড সামর্থ্য থাকা ক্রিকেটারদের বেছে নেওয়া হয়েছে। ফিনিশার হিসেবে টিম ডেভিডকে রাখতেই হয়। সব মিলিয়ে ফ্রেজার-ম্যাকগার্কের জন্য জায়গাটা পাওয়া যায়নি।
তবে বিশ্বকাপ দিয়ে ওয়ার্নার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর ফ্রেজার-ম্যাকগার্কই যে জায়গাটি নিতে যাচ্ছেন, তা নিশ্চিত করে দিয়েছেন নির্বাচক বেইলি। আগামী সেপ্টেম্বরে ইংল্যান্ডে সীমিত ওভারের সিরিজেই দেখা যাবে তাকে।