জাতীয়

আজ বিদ্রোহী কবির ১২৫তম জন্মজয়ন্তী

মহা-বিদ্রোহের রণতূর্য বাদক, যৌবনের পূজারি কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী আজ। প্রেম, মানবতা ও সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ সালে ২৫ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট (১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো এই মহান পুরুষ যুগ যুগ ধরে বাঙালির মানসপটে চির ভাস্বর হয়ে আছেন।

দানবীয় বিরাটত্ব নিয়ে বাংলা সাহিত্যের আকাশ যখন পুরোটাই দখল করে নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঠিক সেই সময় কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব। সেই আবির্ভাব পর্বেই বুঝি দিয়েছিলেন, তিনি ধূমকেতু হতে আসেননি, ধ্রুব তারা হতে এসেছেন এবং ধ্রুব তারা হয়েছেন।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাব ও তত্ত্বের প্রেম, দ্রোহ ও নিগূঢ় দর্শনের জায়গায় সাম্য-মানবতার গান গাইলেন নজরুল। পাকা করে নিলেন বাংলা সাহিত্যে নিজের স্থান। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বাংলা সাহিত্যে যে নামটি উচ্চারিত হয়, সেটি কাজী নজরুল ইসলাম।

তিনি শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর কলম ধারালো তলোয়ারের মতো কাজ করেছে। তিনি বার বার শাসকদের কোপানলে পড়েছেন। নিক্ষিপ্ত হয়েছেন কারাগারে। কিন্তু আদর্শচ্যূত হননি।

কাজী নজরুল ইসলাম শুধু বিদ্রোহী কবি ছিলেন না। ছিলেন মানবতাবাদীও। তার সাম্য ও মানবতাবাদ বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দ্যোতনা সৃষ্টি করে। তার আগে বাংলা কাব্যসাহিত্যে এমন মানবতাবাদ ও সাম্যের বাণী আর কেউ শোনায়নি।

ছোটবেলা থেকেই কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সংগ্রামী। ১৯০৮ সালে পিতার মৃত্যুর পর মাত্র দশবছর বয়সেই রোজগারে নামতে হয় তাকে। মক্তবের শিক্ষক, মুয়াজ্জিন ও মাজারের খাদেম, লেটোর দলের হয়ে গান বাঁধা, নাটকে অভিনয় করা, জীবন ও জীবিকার জন্য কী করেননি তিনি? রেলের ইংরেজ গার্ডের খানসামা, রুটির দোকানের কর্মচারী হিসেবেও কাজ করতে হয়েছে বাংলা সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ কবি কাজী নজরুল ইসলামকে।

তাঁর শিক্ষাজীবন কেটেছে রাণীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুল, মাথরুন উচ্চ ইংরেজি স্কুল, ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরাম স্কুলে। কিন্তু নিদারুণ দারিদ্র্য তাঁকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করতে দেয়নি। সিয়ারসোল রাজ স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন নজরুল।

নজরুল চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি প্রায় ৩ হাজার গান রচনা করেছেন। অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশী, দোলন চাঁপা, ছায়ানট, ইত্যাদি তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা তাঁর উপন্যাস। ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলিমালা ইত্যাদি তাঁর বিখ্যাত গল্পগ্রন্থ। তিনি সুগায়ক ছিলেন। ‘ধ্রুব’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেন।

অভাব ছিল নজরুলের চিরসঙ্গী। তিনি জগতের দরিদ্র ও বঞ্চিত মানুষের দুঃখ-কষ্ট গভীরভাবে অনুভব করেছিলেন। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তাঁর সাহিত্যসাধনা স্তব্ধ হয়ে যায়। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা-গান ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অন্যতম প্রেরণা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবিকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এবং তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয় কবির সম্মান দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *