দেশজুড়ে

আনার হত্যা মামলার পরবর্তী শুনানি ১৩ সেপ্টেম্বর

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার মামলার পরবর্তী শুনানি ১৩ সেপ্টেম্বর ধার্য করা হয়েছে। এই নির্দেশ দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত আদালত।

শুক্রবার (৩০ আগস্ট) ‘কসাই’জিহাদ হাওলাদারকে আদালতে তোলা হলেও অসুস্থতার কারণে এদিন সিয়ামকে পেশ করা হয়নি। পরবর্তী শুনানির দিন দুজনকেই একসাথে আদালতে তোলা হবে।

এর আগে গত ১৬ আগস্ট, মোট ১০১ জন সাক্ষী ও সাক্ষ্য প্রমাণের সহমতে, ২৬৩ পৃষ্ঠার প্রথম চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছিল পশ্চিবঙ্গের পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি। চার্জশিটে জিহাদ হাওলাদার এবং সিয়ামের নাম রয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে চার্জশিটে কিছু বলা হয়নি।

তদন্তকারীদের একাংশের ব্যাখ্যা, তদন্ত শেষ না হলে খুনের কারণ বলা যাবে না। তাছাড়া, এই মামলায় মূল অভিযুক্তকে এখনও জেরা করা যায়নি।

দুজনকেই ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী, ৩৬৪, ৩০২, ২০১ এবং ১২০ বি এবং ৩৪ -এই ধারাগুলোয় মামলা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটাই জামিন অযোগ্য ধারা। ৩৬৪ অর্থাৎ হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ। ৩০২ অপরাধমূলক নরহত্যা। ২০১ তথ্য লোপাট, অর্থাৎ অস্ত্র এবং দেহ প্ল্যান করে সরিয়ে ফেলা এবং ১২০ বি অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র (একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়)। অর্থাৎ এই ধরনের মামলায় সর্বোচ্চ রায় হিসেবে বিচারক আমৃত্যু যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ড দিতে পারেন।

গত ২৩ মে বনগাঁও অঞ্চলের গোপাল নগর থানা অন্তর্গত এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন জিহাদ হাওলাদার। তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

‘কসাই’ জিহাদ খুলনার বাসিন্দা। আনারকে হত্যার প্রায় দুই মাস আগে অভিযুক্তরা জিহাদকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন। এর আগে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেন জিহাদ। জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে জিহাদ জানিয়েছিল, আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই তিনি হত্যা করেছে। আরও চারজন বাংলাদেশি এই কাজে তাকে সাহায্য করেছিল।

অপরদিকে, আনার হত্যা ঘটনায় গত ৭ জুন সিয়াম হোসেনকে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল সিআইডি। তিনি বাংলাদেশের ভোলা জেলার বুরহান উদ্দিন গ্রামের আট নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সিয়াম। পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ এলাকায় আত্মগোপন করেছিল বলে সিআইডি এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল।

গত মে মাসে ঢাকা মহানগর পুলিশের তখনকার কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান বলেছিলেন, আনার হত্যায় জড়িতদের একাধিক জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও খুনের মূল রহস্য এখনো জানতে পারেনি পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলে আসল কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশ।

আনোয়ারুল আজীম কলকাতায় সর্বশেষ যে ফ্ল্যাটে ছিলেন অর্থাৎ বিলাসবহুল সঞ্জিবা গার্ডেনসে, বাংলাদেশের সাবেক গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদের অনুরোধে ওই ফ্ল্যাটের তল্লাশি চালিয়ে সেপটিক ট্যাংক এবং বর্জ্য যাওয়ার পাইপ-লাইন থেকে মাংসের টুকরো, মাথার চুল উদ্ধার করেছিল ভারতের সিআইডি। সেগুলো আনোয়ারুল আজীমের কিনা সে সম্পর্কে পরিষ্কার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে সিআইডি তার কিছুদিন পরে জানিয়েছিল সেসব মানুষের দেহাংশ বিশেষ। ডিএনএ পরীক্ষা হলে বিষয়টা স্পষ্ট হবে। আসার কথাও ছিল আনার কন্যা ডরিনের। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশে আন্দোলনের কারণে জরিন আসতে পারেনি বলেই জানা গিয়েছিল। ফলে আনারই যে হত্যা হয়েছে এখনও তার সঠিক তদন্ত উঠে আসেনি। কারণ দেহাংশ এখনও পরীক্ষা করতে পারেনি দুই দেশের পুলিশ।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন আনার। একই সাথে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন আনোয়ারুল আজীম আনার। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন। এরপর ১৮ মে স্থানীয় থানায় গোপাল বিশ্বাস জিডি করলে তদন্ত শুরু হয়। এরই মধ্যে পুলিশ গত ২২ মে জানায় নিউ টাউনের সঞ্জিবা গার্ডেনসে খুন হয়েছেন এমপি আনার।

এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে, পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা পুলিশ, সিআইডির দেওয়া তথ্যে বাংলাদেশে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তারা হলেন- আমানুল্লা সাঈদ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুঁইয়া (৫৬), তানভীর ভুঁইয়া (৩০) ও সেলেস্তি রহমান (২২)। পরে মে মাসে যশোর থেকে সাইফুল আলম মোল্লা মেম্বার নামে আরেকজনকে আটক করে ডিবি। তিনি পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা খুলনার শিমুল ভুঁইয়ার সহযোগী বলে জানা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *