আনোয়ারায় চিংড়ি শুঁটকি তৈরির ধুম
আনোয়ারা উপকূলের রায়পুরের উঠান মাঝির ঘাটের চরে চলছে চিংড়ি শুঁটকি তৈরির ভরা মৌসুম। বর্ষাকাল বিদায় নেওয়ার পরই শীতে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় শুঁটকি উৎপাদন যেমন বেশি হয়, সেখানেই চলে-চলছে শুঁটকি শুকানোর কাজ। আর শীত থেকে গ্রীষ্ম পর্যন্ত চলে শুঁটকি তৈরি। এখানকার উৎপাদিত চিংড়ি শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানিও হয়।
এবার প্রায় কোটি টাকার শুঁটকি রপ্তানির আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর ঘেঁষে গহিরা গ্রামের অবস্থান। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের জীবিকা সমুদ্রে মাছ ধরা। শুষ্ক মৌসুমে গ্রামের অনেক বাসিন্দা শুঁটকির ব্যবসা করে বাড়তি আয়ও করেন। বর্তমানে এলাকায় ১০ থেকে ১৫ টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে চিংড়ি শুঁটকি তৈরি হয় বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রায়পুরের উঠান মাঝির ঘাট থেকে বার আউলিয়া পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে শুঁটকি শুকানোর কাজ। শুঁটকি তৈরিতে রাত-দিন ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। শুঁটকি মহালগুলোতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। আর সরকারি সহযোগিতা পেলে এ শিল্পকে আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে আশা ব্যবসায়ীদের।
ব্যবসায়ীরা জানান, এখানকার শুঁটকি বিক্রি হয় চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকার শুঁটকির আড়তগুলোতে। প্রতি মণ চিংড়ি শুঁটকি ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়। প্রতি মণে লাভ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। একেকটি শুঁটকি মহাল সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ মণ শুঁটকি বিক্রি করে।
কক্সবাজার উপজেলার কুতুবদিয়া থেকে আসা নুরুল ইসলাম বলেন, নিজ অর্থ ও শেয়ারদারদের সাথে নিয়ে শুঁটকি উৎপাদনের জন্য একটি মহাল তৈরি করেছি। প্রতিদিন শত শত কেজি সামুদ্রিক চিংড়ি মাছের শুঁটকি উৎপাদিত হচ্ছে এখানে। কোনো ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এই শুঁটকির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নাসির বলেন, বর্তমানে সাগরে চিংড়ি কম ধরা পড়ছে, আগামী কয়েক দিন পর আরো বেশি বেশি ধরা পড়বে বলে আশা করছি। আমরা সমুদ্র থেকে আনা মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। তারা ওই মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করেন। এলাকার অনেক ব্যবসায়ী শুঁটকি মহালগুলোতে মাছ বিক্রি করেও ভালো আয় করছেন।
আনোয়ারা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা রাশেদুল হক বলেন, আনোয়ারা উপকূলের বিভিন্ন স্থানে শুঁটকি উৎপাদন করছে ব্যবসায়ীরা। বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনের ক্ষেত্রে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সচেতনতা মূলক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ডিডিটি পাউডার বা কীটনাশক না মেশালে শুঁটকির প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায়।