চট্টগ্রামজাতীয়

আনোয়ারার মেম্বারের ‘অত্যাচারে’ অতিষ্ঠ মানুষ

চট্টগ্রামের আনোয়ারার বারশত ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) জমির উদ্দিনের ‘অত্যাচারে’ স্থানীয় বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মেম্বার জমিরের বিরুদ্ধে জায়গা দখল, চুরি, চাঁদাবাজি, মাতলামি ও নারীদের শ্লীলতাহানিসহ নানা অভিযোগ আছে। তবুও রহস্যজনক কারণে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

সর্বশেষ গত সোমবার (১৩ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে বৈরাগ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আহমেদ নুর মঞ্জিল নামক একটি বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া এক নারীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠে মেম্বার জমিরের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী আনোয়ারা থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান।

হাটহাজারীর স্থায়ী বাসিন্দা ওই নারী একুশে পত্রিকাকে অভিযোগ করে বলেন, ‘বারশত ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের রাস্তার উত্তর পাশে বৈরাগ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আহমেদ নুর মঞ্জিলে আমার খালা বসবাস করেন। খালার বাসায় আমি বেড়াতে এসেছিলাম। গত সোমবার খালার বাসায় জমির মেম্বার এসে আমাকে নিয়ে আপত্তিকর কথা বলে। এক পর্যায়ে আমাকে তুলে নিয়ে যেতে চায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেদিন সম্ভবত নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন জমির মেম্বার। এক পর্যায়ে আমার খালার বাসার জমিদার (মোহাম্মদ আনিসুর রহমান) দোতলা থেকে নেমে তাকে জিজ্ঞেস করে, সে এখানে কেন ঢুকেছে? এবং কার অনুমতি নিয়ে বাসার গেইট খুলে ঢুকেছে। এটা বলাতে জমিদারের সাথেও খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করেন মেম্বার। এবং মাতলামি করতে করতে পায়ের স্যান্ডেল রেখে চলে যান।’

সেদিনের ঘটনার বিষয়ে জমিদার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার বাড়িটি জমির মেম্বারের ওয়ার্ডে পড়েনি। তারপরেও সে আমার বাড়িতে এসে মাতাল অবস্থায় মেম্বারের ক্ষমতা দেখায়। আসল ঘটনা হচ্ছে, আমার ভাড়াটিয়ার কাছে তার ভাগনি বেড়াতে এসেছে। তাকে দেখে মেম্বার মদ খেয়ে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে মাতলামি করে, শ্লীলতাহানি করে। আমি এগিয়ে আসার পর পায়ের স্যান্ডেল ও একটি লাঠি রেখে চলে যায়।তিনি আরও বলেন, ‘মেম্বারের ক্ষমতার অপব্যবহার করছে জমির। এলাকায় জমি দখল, মহিষ চুরি, যৌন হয়রানিসহ নানা অপকর্ম সে করেই যাচ্ছে।’

গত সোমবার আনিসুরের বাড়িতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে চলে যাওয়ার সময় চিৎকার চেঁচামেচি শুনে নুর বেগম নামে এক প্রতিবেশি এগিয়ে যান। মাতলামি করার কারণ জানতে চাওয়ায় জমির মেম্বার তার গলা চিপে ধরে গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন, কানের দুল নিয়ে যান বলে অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয়ে প্রতিকার পেতে গতকাল মঙ্গলবার আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশতিয়াক ইমনের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন নুর বেগম।

ভুক্তভোগী নুর বেগম একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘জমির মেম্বারের জ্বালায় আমরা অতিষ্ঠ। সে মদ খেয়ে রাস্তায় মাতলামি করে। কেউ কিছু বললে মারধর শুরু করে। গত সোমবার রাতে আমাদের বাড়ির পাশের বিল্ডিংয়ে একটি মেয়ে বেড়াতে এসেছে জেনে জমির মেম্বার সেখানে ডুকে মাতলামি করে। আমি তাকে বলেছি রাস্তায় কেন মাতলামি করছে। এই কথা বলাতে সে আমাকে মারধর শুরু করে। এবং আমার গলার চেইন, কানের দুল কেড়ে নিয়ে যায়।’

জমির মেম্বারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন অভিযোগ করে স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দ নুর বলেন, ‘গত আগস্ট মাসে জমিরের বিরুদ্ধে আমি চাঁদাবাজির মামলা করেছিলাম। এই মামলার তদন্ত করতে আদালত আনোয়ারা থানা পুলিশকে দায়িত্ব দেয়। এখনও পর্যন্ত পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট আদালতে পাঠায়নি।’

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘জমির মেম্বার জুয়ার আসর বসানো, মাদক সেবন করা ও জায়গা দখল করার অনেক অভিযোগ আছে। যত অপকর্ম আছে সব করে আসছেন তিনি। এতো অপকর্মের পরও কিছু পুলিশের সঙ্গে তাকে উঠা-বসা করতে দেখি। যা খুবই দুঃখজনক’

গতকাল মঙ্গলবার দেখা করে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বারশত ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) জমির উদ্দিন বলেন, ‘আমি বর্তমান মেম্বার। এলাকার ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব আমার। এভাবে (অভিযোগ) হলে তো কোথাও যাওয়া যাবে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে জমির বলেন, ‘আমি মদ খাই না, একটু সিগারেট খাই।’ এ সময় জমিরের সঙ্গে থাকা একজন বলে উঠেন, ‘মেম্বার সাহেবের এসবের নেশা নেই, একটু জুয়ার নেশা আছে। না হয় মেম্বার খারাপ না!’ এই কথা বলার পর জমির বলেন, ‘আপনাদের যা ইচ্ছা লিখেন। আমি ভালো মানুষ বলে এলাকার মানুষ আমাকে মেম্বার বানিয়েছে।’

জমির মেম্বারের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীর অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আনোয়ারা থানার ওসি সোহেল আহমেদ বলেন, ‘অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখব। যথাযথ প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

একই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আনোয়ারার ইউএনও ইশতিয়াক ইমন বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *