শিক্ষা

‘আমারে দিছে ৫৩ হাজার, খরচ হইছে ১ লাখ’, অধ্যক্ষের ভিডিও ভাইরাল

‘টিএনও’র সম্মানী পাঠাইতে হবে, ডিসির সম্মানী পাঠাইতে , এডিসি’র সম্মানী পাঠাইতে হবে, দুজন ট্যাগ অফিসার আছে তাদের সম্মানী দিতে হবে। আমারে ২১ দিনের ট্রেনিং এ নিছে, আমারে দিছে ৫৩ হাজার টাকা, আমার খরচ হইছে ১ লক্ষ টাকা।’

ভিডিও ক্লিপে এমন সব কথা বলতে শোনা গেছে সরকারি পাতারহাট আর সি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) শহীদুল ইসলামের। আর সেই ভিডিওক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাল ভিডিওটি নিয়ে ইতোমধ্যে সমালোচনার ঝড় চলছে সর্বত্র।

সম্প্রতি ছড়িয়ে পরা ৩ মিনিট ৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওক্লিপের শুরুতে এক শিক্ষার্থীকে (ছাত্রী) বলতে শোনা যায়, স্যার আমাদের পরীক্ষা দিতে হলে ৫০০ টাকা দিয়ে প্রবেশপত্র নিতে হবে। তখন কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, এটি তোমাদের কাছে আমার আবেদন।

এসময় ওই ছাত্রী বলেন, এটা আমাদের কাছে আবেদন, আর আমরা যদি ৫০০ টাকা দিয়ে অ্যাডমিট কার্ড না নিতে পারি! তখন অধ্যক্ষ বলেন, এটি তোমার উইশ। এরপর ছাত্রী বলেন, এখন সেক্ষেত্রে কি করতে পারি। উত্তরে অধ্যক্ষ বলেন, তুমি আমার সঙ্গে যদি যুদ্ধ করতে নামো, তাহলে যুদ্ধ কন্টিনিউ করতে পারো, সমস্যা নেই। সেকেন্ড ইয়ার, থার্ড ইয়ার তুমি যুদ্ধ করে যেতে পারো, যুদ্ধ করা তোমার অধিকার। তখন ছাত্রী বলেন, এক্ষেত্রে ৫০০ টাকা দিয়ে যদি আমি অ্যাডমিট না নিই তাইলে মানে! তখন অধ্যক্ষ বলেন-এটা তোমার ব্যক্তিগত বিষয়।

আবার ছাত্রী বলেন, স্টুডেন্টের তো অ্যাবিলিটি থাকে না, ২ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে ফরম ফিলাপ করার পরে।

এরপর ওই ছাত্রীকে কথা বলতে না দিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, অ্যাবিলিটির কথা বইলো না, যারা গরিব তারা টাকা দিয়ে গেছে, রিকশাওয়ালার পোলা টাকা দিয়া গ্যাছে, যারা ধনী, সামর্থ্যবান তারা যুদ্ধ করে, প্রিন্সিপালকে ক্যামনে হেনস্তা করা যায়। আরে তুমি যে অ্যানড্রয়েট ফোনটা ব্যবহার করো, আমি স্টুডেন্ট ছিলাম তখন ওইটা কল্পনাও করতে পারি নাই। তুমি গরিব হইলা কোনডা দিয়া। আমার ওপর দায় চাপাও, আমার বেতনের টাকা দিয়া তোমাগো পেছনে বাবা খরচ করতে পারবো না। আমার তো সংসার আছে। টিএনও’র সম্মানী পাঠাইতে হবে, ডিসির সম্মানী পাঠাইতে , এডিসি’র সম্মানী পাঠাইতে হবে, দুইজন ট্যাগ অফিসার আছে তাদের সম্মানী দিতে হবে। আমারে ২১ দিনের ট্রেনিং এ নিছে, আমারে দিছে ৫৩ হাজার টাকা আমার খরচ হয়েছে ১ লক্ষ টাকা। এখন আমার খরচ না দিলে ট্রেনিং করবো না! এটি সমঝোতার পথ। তোমরা সমঝোতার পথ বন্ধ করে দিলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এরপর ওই শিক্ষার্থী বলেন, না স্যার স্টুডেন্ট হিসেবে আমাদের জানার অধিকার আছে, আমরা জানলাম এই আরকি।

উত্তরে অধ্যক্ষ বলেন, এইটাই, তোমাদের কাছ থেকে বলতে পারো আমি জোর করেই নিচ্ছি একরকম। একরকম আমি জোর করে ধরে তোমাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছি। আমি কি করবো! অনার্সের কেন্দ্র ফি এক টাকাও নেওয়া হয়নি, এক টাকাও বাড়তি নেওয়া হয় নাই, আসতেছে নিওয়া যাইতেছে। আমারও টেনশন নাই। আমারও ডিসির সম্মানী পাঠান লাগবে না, এডিসিরও লাগবে না, টিএনওর লাগবে না ওডা বিএম কলেজের ফাংশন। ওখানে ডিসির সম্মানী নির্ধারিত, সে ১০ জন পরীক্ষা দিলেও যা, ১২ শত জন দিলেও তা। ওইটা দিয়া পাঠাইলেই হবে, সরকার নির্ধারণ কইরা দিছে- এরে এতে দিতে হবে, এরে এতে দিতে হবে, এরে এতে দিতে হবে। তারা তো বোঝে না, আমার কেন্দ্রের এই অবস্থা। বিএম কলেজ সরকারি কলেজ সে দেবে, আর আরসি কলেজ সরকারি কলেজ সে দেবে না কেন?

সচেতন মহল বলছেন কলেজের প্রধানের দায়িত্ব পালন করে শিক্ষার্থীদের সামনে এ ধরনের কথা বলা দুঃখজনক। তবে এ বিষয়ে জানতে কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) শহীদুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

আর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এরইমধ্যে জেলা প্রশাসক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রুম্পা সিকদার।

এদিকে এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দিনভর অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) শহীদুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে পাতারহাট আর সি কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।

এর পর প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গেলে পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ফি মওকুফ করার কথা বলেন অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) শহীদুল ইসলাম।

শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজ প্রশাসন বিভাগ থেকে ডিগ্রি ২য় বর্ষের প্রবেশপত্র নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত ৫০০ টাকা ফি দেওয়ার জন্য বলা হয়। এ বিষয়ে অধ্যক্ষের কাছে শিক্ষার্থীরা গেলে তিনি যে কথাগুলো বলেন তা ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে রয়েছে। আর ভিডিওটি ছড়িয়ে পরার পর শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং তার পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করে।

এ বিষয়ে মেহেন্দিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক বলেন, কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের শান্ত করেন। তাদের দাবি ডিসি ও ইউএনওর কাছে লিখিতভাবে দেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। পরে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেয়।

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ কুমার গাইন বলেন, অ্যাডমিট কার্ড দেওয়ার সময় কোন অর্থ নেয়া যাবে না। সেটা যদি পূর্বের বকেয়া হয়, তাও নেয়া যাবে না। এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ। তবুও যদি এরকম কেউ করে থাকে অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রবেশপত্র দেওয়ার জন্য টাকা নেওয়ার নিয়ম নেই। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। তার এ বক্তব্যের বিষয়টি নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পত্র দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *