কক্সবাজারচট্টগ্রাম

‘আমি পড়তে চাই, আমার চোখ লাগবে’

‘‘আমি পড়তে চাই, আমার চোখ লাগবে।’’ এ কথা বাবা-মায়ের কোলে বসে বলছিলো চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে শিক্ষকের কঞ্চির আঘাতে বাম চোখের দৃষ্টি হারানো মো. আয়াতুল ইসলাম (৭)।

আয়াত উপজেলার পোপাদিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বদ মেম্বার বাড়ির মো. সাজ্জাদের ছেলে।

গত ২৬ মে পড়া বলতে না পারায় হেফজখানার শিক্ষকের কঞ্চির আঘাতে আয়াত হারিয়েছে বাম চোখের দৃষ্টি।

এর বিচার চেয়ে গত ২৪ জুন আয়াতের মা স্বপ্না আকতার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

স্বপ্না আকতার বলেন, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ছেলেকে উপজেলার জোটপুকুর পাড় এলাকার বাগে সিরিকোট তাহফিজুল কোরআন আইডিয়াল মাদ্রাসার হেফজ বিভাগে ভর্তি করি।

সেখানে গত ২৭ মে আয়াত পড়া বলতে না পারায় হেফজখানার শিক্ষক শাহীন আকতার বাঁশের কঞ্চি দিয়ে মারধর করেন। এর একপর্যায়ে কঞ্চির আঘাত লাগে আয়াত চোখে। এই বিষয়টি গোপন রেখে শিক্ষকরা চোখে বিভিন্ন ধরনের ড্রপ ব্যবহার করে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করেন এবং মা-বাবাকে না বলার জন্য আয়াতকে নিষেধ করেন। ঘটনার দুইদিন পর আয়াত চোখে দেখতে পাচ্ছে না জানালে ২৯ মে ভোর ৫টার সময় আয়াতকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে চলে যান।

আয়াতের মা বলেন, তারা কোনো কথা না বলে ছেলেকে বাড়িতে দিয়ে যাবার পর দেখি আয়াতের গায়ে জ্বর। তখন নাপা খাইয়ে দিলে জ্বর কিছুটা কমে আসলে স্থানীয় ফার্মেসিতে নিয়ে যায়। সেখানের লোকজন হাসপাতালে নিয়ে যাবার জন্য বলেন। তাৎক্ষণিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তারা চক্ষু বিশেষজ্ঞ আসেনি জানালে নগরীর কাপ্তাই রাস্তা মাথায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে দেখালে তারা দ্রুত নগরীর পাহাড়তলী ফয়েজ লেক চক্ষু হাসপাতালে নিতে বলেন। সেখানে ভর্তি করি এবং দুইটি অপারেশন হয় আয়াতের বাম চোখে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আয়াতের বাম চোখে আর দেখতে পাবে না। তবে তার সুস্থতার জন্য দীর্ঘদিন চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। গত ২ জুন হাসপাতাল থেকে ছাড় পেয়ে আয়াতকে চট্টগ্রামের একাধিক চক্ষু বিশেষজ্ঞকে দেখিয়েছি। সবাই একথা জানিয়েছেন।

আয়াতের বাবা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এ পর্যন্ত একটিবারও মাদ্রাসার পক্ষ থেকে খোঁজ নেয়নি। উল্টো একথা কাউকে না বলার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। অথচ ছেলেকে হাফেজ বানাতে চেয়েছিলাম। এখন পুরো জীবনটাই শেষ করে দিয়েছে। এই ছেলে সারা জীবন পার করবে কিভাবে? তারা ভর্তির জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকা নিয়েছে। মাসে হাজার টাকা করে নিত। আমি উপজেলা সদরে একটি মুদি দোকানে চাকুরি করি। আয়াতের চিকিৎসায় এ পর্যন্ত ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে।

মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মো. মহিউদ্দিন মানিক বলেন, আায়াতের চোখ লাল হওয়ায় অভিভাবকের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলাম ভোরে। মাদ্রাসায় কেউ মারধর করেনি। তবে অভিযুক্ত শিক্ষক শাহীন আকতারের ঠিকানা বা মোবাইল নম্বর দিতে অস্বীকার করেন তিনি।

অভিযোগ তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান হোসাইন সজীব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *