বিনোদন

‘আলো আসবেই’ গ্রুপের ভাবনাকে নিয়েই কাজ করতে চান নির্মাতা

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে দুই ভাগে বিভক্ত হয় দেশের শিল্পী সমাজ। একদল ছাত্রদের পক্ষে রাস্তায় নামে। আরেক দল বিগত সরকারকে (শেখ হাসিনা) সমর্থন করে ছাত্রদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।

সরকার পতনের পর ফাঁস হয় আওয়ামীপন্থী শিল্পীদের হোয়াটস্যাপ গ্রুপ ‘আলো আসবেই’-এর কিছু স্ক্রিনশট। সেখানে দেখা যায় আন্দোলন চলাকালীন ছাত্র ও আন্দোলনে সমর্থনকারী শিল্পীদের প্রতি বিষেধাগার করা হয়েছে। গরম পানি ঢেলে দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

এরপরই গ্রুপের ১৬০ জনের ওপর ফুঁসে উঠেছেন আন্দোলনে সমর্থনকারী শিল্পীরা। অনেকেই তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। কেউ দিয়েছেন বয়কটের ডাক। নির্মাতাদের মধ্যেও তাদের নিয়ে কাজ করতে দেখা গেছে অনীহা। ফলে ‘আলো আসবেই’-এর শিল্পীদের ক্যারিয়ার ঝুঁকিতে।

অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনাও ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের সদস্য। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গণহত্যার সমর্থনে গোপন হোয়াপসঅ্যাপ গ্রুপে সক্রিয় ছিলেন আশনা হাবিব ভাবনা। শেখ হাসিনার পতনের পর তা ফাঁস হলে তোপের মুখে পড়েন তিনি। এমন বিতর্কিত ভূমিকার জন্য বয়কটের মুখে পড়েছেন ভাবনা। এখন তার হাতে আছে ‘আলতাবানু জোছনা দেখেনি’ নামের একটি সিনেমা। গ্রুপে যুক্ত থাকার কারণে ভাবনা কি বাদ পড়ছেন ছবিটি থেকে?

এর পরিচালক হিমু আকরাম এখনই অভিনেত্রীর বিষয়ে কঠিন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে রাজি নন। কথা বলে জানা গেল, এসব নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন নন।‘আলো আসবেই’ গ্রুপে ভাবনার সক্রিয়তা নিয়ে তিনি বলেন, ‘যে স্ক্রিনশট আমি পেয়েছি সেখানে ভাবনা বলেছেন, আমি ঢাকায় নেই। কিশোরগঞ্জে শুটিং করছি। এর বাইরে তার কোনো সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়নি।’

তবে সক্রিয়তা কম থাকলেও দুই নৌকায় পা দিয়েছিলেন ভাবনা। সামাজিক মাধ্যমে ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন। আবু সাঈদের প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন। কিন্তু ভেতরে ভেতরে গ্রুপে যুক্ত থেকে আন্দোলনের বিপক্ষে সমর্থন যুগিয়েছেন।

একটি গণমাধ্যমকে নির্মাতা বলেন, ‘সিনেমাটিতে ভাবনার চরিত্রের নাম জুলেখা। চরিত্রটি নিয়ে যখন তার সঙ্গে বসি তখন এই বিষয়গুলো ছিল না। অন্যদের মতো আমিও জানতাম না। এছাড়া আমার কাছে মনে হয়েছে চরিত্রটির জন্য ভাবনা উপযুক্ত। তাছাড়া প্রতিশ্রুতিরও ব্যাপার আছে। অতএব কে কী বিতর্ক করেছেন এটা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন না।ভাবনাকে নিয়েই কাজটি করব।’

বিতর্কিত অভিনয়শিল্পীকে নেওয়ায় ছবিটির ওপর প্রভাব পড়বে না বলেও মনে করছেন হিমু। তার কথায়, ‘সিনেমাটি হলে মুক্তির পর নেটফ্লিক্স কিংবা অ্যামাজন প্রাইমে যাবে। সুতরাং কয়টা হল পাব তার ওপর আমি নির্ভরশীল না। আমার লক্ষ্য শুধু বাংলাদেশ না। গোটা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী দর্শক। যাদের সংখ্যা ৪০ কোটির মতো। এছাড়া যারা নেটফ্লিক্স কিংবা অ্যামাজনের দর্শক তারা হলে গিয়ে সিনেমা দেখেন না। তাদের সেলফোনই একেকটি হল। যেহেতু আমার দর্শক টার্গেট নেটফ্লিএক্স কিংবা অ্যামাজন সেহেতু শুধু ভাবনা না আরও বিতর্কিত কেউ যদি সিনেমাটিতে থাকত মনে হয় না সমস্যা হতো।’

তবে আনুষ্ঠানিকভাবে যদি ছাত্রদের বিরোধিতাকারী গ্রুপের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় তবে তা মেনে নেবেন বলে জানান হিমু আকরাম। তার কথায়, ‘আমাদের দেশে শিল্পীদের বিভিন্ন সংগঠন আছে। ডিরেক্টর গিল্ড, অ্যাক্টর ইক্যুইটি প্রভৃতি। সংগঠনগুলো যদি আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয় যে এই শিল্পীদের নিয়ে কাজ করা যাবে না তাহলে মানতে হবে। আমার কিছু করার থাকবে না। তবে একজন ভদ্রলোক হিসেবে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ওই জায়গা থেকে ভাবনা কেন আরও বিতর্কিত কেউ হলেও আমি কাজ করব।’

‘আলতাবানু জোছনা দেখেনি’ ও ভাবনাকে নিয়ে নির্মাতার শেষ মন্তব্য, ‘আমার শুটিং স্থগিত। অতএব আমি অপেক্ষা করি। দেখি কী হয়। যদি এরকম কোনো সিদ্ধান্ত (নিষেধাজ্ঞা) আসে তখন জুলেখা চরিত্রটি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *