আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০ ঘণ্টায় খাবার পেয়েছেন কয়েকটি বিস্কুট
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে গত রোববার দুপুরে বলেশ্বর নদীর পানি বাড়লে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা গ্রামের পান্না মিয়া পরিবারসহ চলে যান রুহিতা আশ্রয়কেন্দ্রে। পানি নেমে গেলে মঙ্গলবার সকালে বাড়ি ফেরে তারা। কিন্তু এর আগে যে ৪০ ঘণ্টার বেশি সময় তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হয়েছে, সে সময় তারা খাবার পেয়েছেন মাত্র কয়েকটি টোস্ট বিস্কুট। পান্না মিয়া জানান, রুহিতা আশ্রয়কেন্দ্রে তাদের মতো আরও শত শত নারী-পুরুষ ও শিশু এমন প্রায় অভুক্ত ছিল।
পাথরঘাটার সব আশ্রয়কেন্দ্র নিয়েই একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আশ্রিতদের অভিযোগ, শুধু অভুক্ত নয় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো বসবাস উপযোগী ছিল না। এমনকি এত মানুষের জন্য ছিল না পর্যাপ্ত বাথরুম। ফলে যেখানে তাদের ঠাঁই দেওয়া হয়েছিল, এর আশপাশেই অনেকে মলমূত্র ত্যাগ করেছেন। এ ছাড়া ছিল না পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, খাবার পানি ও মশার কয়েল। প্রশাসনের লোকজন এসে খোঁজখবরও নেয়নি।
আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারের কষ্টের বর্ণনা দেন বরগুনা শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ বাহিরকুলের বাসিন্দা হাসিনা বেগম। রোববার বিষখালী নদীর পানি বাড়লে অন্যদের সঙ্গে পরিবারের পাঁচজনকে নিয়ে তিনিও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেন। দুপুর ১২টায় আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে রাত ১২টার পর উপজেলার চেয়ারম্যানের পাঠানো খিচুড়ি পান। এর পর সোমবার বিকাল ৫টার দিকে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পাঠানো খিচুড়ি দেওয়া হয় তাদের। এর পর মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তারা আর কোনো খাবার পাননি।
পাথরঘাটায় দরিদ্রদের প্রায় সবাই সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। পরিবারসহ সোমবার সকালে তাদের অনেকে আশ্রয়কেন্দ্র গেলেও ফিরে এসে পড়েছেন আরেক সমস্যায়। জলোচ্ছ্বাসে অনেকের বাড়িঘর ভেসে গেছে। বৈরী আবহাওয়ায় মাছ ধরতে না যাওয়ায় তাদের হাতে টাকাপয়সা নেই।
হাসিনা বেগম জানান, বাড়িতে ফিরে দেখতে পান চুলার মধ্যে পানি জমে আছে। রান্না করতে না পারায় মঙ্গলবার দুপুরে দোকান থেকে শুকনা খাবার কিনে খেয়েছেন। কতবেলা এভাবে থাকতে হবে, তার নিশ্চয়তা নেই।
রুহিতা গ্রামের কালু মিয়া জানান, ২০০৭ সালে সিডরের সময় বাঁধের ভেঙে যাওয়া দেড় কিলোমিটার অংশে রিং বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রিমালে রিং বাঁধের ওপর দিয়ে পানি ঢুকে প্রায় ছয় হাজার পরিবারের বসতঘর ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। গ্রামের ৯০ ভাগ ঘরের চালা উড়ে গেছে। কিন্তু গতকাল দুপুর পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ খোঁজ নেননি।
অভিযোগের বিষয়ে পাথরঘাটার ইউএনও মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান খান বলেন, উপজেলায় ১৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে তারা বাড়ি ফিরে গেছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটতে পারে। আগামীতে এসব বিষয়ে সতর্ক থাকা হবে।
বরগুনা-২ আসনের এমপি সুলতানা নাদিরা জানান, পাথরঘাটায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। তিনি শিগগিরিই পাথরঘাটা পরিদর্শনে আসবেন। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।