ইরান-সৌদি সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা; বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মোড়
দীর্ঘ সাত বছরের অচলাবস্থার পর চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরব নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে সম্মত হয়। এ বিষয়টি শুধু মুসলিম বিশ্ব নয়, সামগ্রিক বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন আশা, আকাংখা ও শান্তির বাতায়ন খুলে দিয়েছে। মোট কথা সংঘাতের পথ ছেড়ে উভয় দেশই এখন কূটনৈতিক উপায়ে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিরসনের প্রয়াস পেয়েছে। এ সম্পর্ক পুনঃস্থাপন হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের মধ্যস্থতায়। এ কারণে এটা বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মোড় বা নয়া দিগন্তের সূচনা করেছে।
২০১৬ সালে রিয়াদ ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করে। সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য রিয়াদের পক্ষ থেকে অজুহাত ছিল তেহরান এবং মাশহাদে অবস্থিত দেশটির দূতাবাস এবং কনস্যুলেটে হামলা। তবে ইরানি কর্তৃপক্ষ ওই হামলার নিন্দা জানিয়েছিল। এরপর ইরান এবং তার মিত্রদের বিরুদ্ধে সৌদি সরকার নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেছে। তারা ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার সর্বোচ্চ চাপ নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সমর্থক ছিল।
২০২১ সাল থেকেই রিয়াদ এবং তেহরানের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং সাবেক ইরাকি সরকার দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করে আসছিল। বাগদাদে ইরান ও সৌদি আরবের প্রতিনিধিদের মধ্যে পাঁচ দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই দেশের কর্মকর্তারা সুস্পষ্টভাবে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন এবং অবশেষে চীনের মধ্যস্থতায় তারা সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের লক্ষ্যে একটি চুক্তিতে পৌছাতে একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করে।
রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বহাল করা আমেরিকা ও ইসরাইলের অন্যতম মাথাব্যাথার কারণ। একদিকে, এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি বিশ্ব ব্যবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের মধ্যস্থতায় হয়েছে। অন্যদিকে এই চুক্তি সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে ব্যবধান ও বিভেদ সৃষ্টির ওয়াশিংটন ও তেল আবিবের প্রচেষ্টার ব্যর্থতার দিকটি তুলে ধরছে। একইসঙ্গে এই চুক্তিকে এ অঞ্চলে বিশেষ করে পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে আমেরিকা ও ইসরায়েলের ইরানভীতি সৃষ্টি করার অপকৌশলের পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্বহালে চুক্তি পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে গঠনমূলক প্রভাব ফেলবে। ফলে এই চুক্তির ঘোষণা এ অঞ্চলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এবং এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ এটাকে স্বাগত জানিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান একটি টুইটে লিখেছেন, ‘ইরান এবং সৌদি আরবের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্কের প্রত্যাবর্তন দুই দেশ, অঞ্চল এবং ইসলামিক বিশ্বের জন্য দুর্দান্ত সক্ষমতা বয়ে আনবে।’
আন্তর্জাতিক বিষয়ের বিশ্লেষক হোসেইন বেহেশতিপুরও বিশ্বাস করেন যে রিয়াদ এবং তেহরান উভয়ই মহান আঞ্চলিক শক্তি। যারা তাদের জাতীয় স্বার্থে একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারে। এছাড়া এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা কমানোর পাশাপাশি এই অঞ্চলে বিশেষ করে ইয়েমেনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে পারে।