ইলিশের অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান
জাতীয় মাছ ইলিশের অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পাওয়া গেছে। মাছটির ত্বক ও অন্ত্রের অণুজীবগুলোর গঠন ও বৈচিত্র্য উদ্ঘাটন করে এক অনন্য প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। যা দেশে প্রথমবারের মতো এমন উন্মোচন বলে দাবি গবেষকদলের।
গবেষণাটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয় ও ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যৌথভাবে পরিচালনা করেন। মেটাজিনোমিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইলিশ মাছের ত্বক ও অন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের অনুজীব শনাক্ত করা হয় গবেষণায়। গবেষণা প্রবন্ধটি জনপ্রিয় নেদারল্যান্ডস এর সাময়িকী ‘মলিকুলার বায়োলজি রিপোর্টস’ এ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা পত্রটি গত ডিসেম্বরে গৃহীত হয়।
গবেষণায়, বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের গভীর অংশ (কক্সবাজার), বঙ্গোপসাগরের মোহনা (চট্টগ্রামের কাট্টলী) এবং পদ্মা (মানিকগঞ্জ) ও মেঘনা (চাঁদপুর) নদী থেকে ইলিশ মাছ সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় ৯ টি বিভাগ, ৩৫ টি বর্গ ও ১২১ টি ‘গণের ব্যাকটেরিয়া’ শনাক্ত করা হয়েছে। ত্বক ও অন্ত্রে ৬০ শতাংশের বেশি প্রোটিওব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। অন্ত্রে পাওয়া উল্লেখযোগ্য ব্যাকটেরিয়াসমূহ হল সেরাশিয়া, ভিব্রিও, ল্যাক্টোকক্কাস, স্যালমোনেলা, সিউডোমোনাস, প্রিভোটেলা, লিউকোব্যাক্টার ইত্যাদি। ত্বকের অনুজীবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সাইক্রোব্যাক্টার, অ্যাসিনেটোব্যাক্টার, ক্রাইসিওব্যাক্টেরিয়াম প্রভৃতি। ইলিশে পাওয়া উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো হল- সেরাশিয়া, ল্যাক্টোকক্কাস, লিউকোব্যাক্টার, প্রিভোটেলা, সাইক্রোব্যাক্টার প্রভৃতি। ইলিশ মাছে অনন্য স্বাদ, পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি, ছোট শিকলবিশিষ্ট ফ্যাটি এসিড তৈরি, উচ্চ রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং বিভিন্ন পরিবেশের অভিযোজনে এই সকল ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির সম্পর্ক থাকতে পারে বলে মনে করেন গবেষকরা।
গবেষকরা জানান, উপকারী এ প্রোবায়োটিক বাণিজ্যিক উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের মৎস্য চাষে ব্যবহার করা গেলে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। বর্তমানে মৎস্য চাষে মাছ রোগমুক্ত রাখতে বিপুল পরিমাণ ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়, যা মাছকে রোগমুক্ত রাখলেও জলজ বাস্তুতন্ত্রের অনেক ক্ষতি করে। এ ধরনের উপকারী প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার জলজ প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রেখে মৎস্য চাষে নতুন বিপ্লব আনতে পারে।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম রফিকুল ইসলাম এবং মেরিন সায়েন্স ইনস্টিটিউটের গবেষক অধ্যাপক ড. এস এম শরীফুজ্জামান। সহ গবেষক ছিলেন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক আফরোজা আক্তার তন্বী, ফারজানা শারমিন, অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান, গবেষণা সহযোগী সবুজ বিশ্বাস ও মেরিন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক ড. শাহনেওয়াজ চৌধুরী। সহযোগিতায় ছিলেন ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার নোবেল জয়ী গবেষণাগার ব্যারি মার্শাল ল্যাব এর আলফ্রেড তাই ও কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাভেদ ফয়সাল।
গবেষণায় উঠে এসেছে, লবণাক্ততা ও পানির অনুজীবের বিন্যাস ইলিশ মাছের ত্বক ও অন্ত্রের অনুজীব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভবিষ্যতে ইলিশ মাছের উন্নয়নে এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে গবেষকদলের বিশ্বাস।