ধর্ম

ইসলাম কোনোভাবেই সন্ত্রাস বরদাশত করে না

সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাসীই। এটাই তাদের পরিচয়। সন্ত্রাসীরা তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ধর্ম ও মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ এক যুদ্ধে লিপ্ত। তাদের এমন অভ্যাস ও কাজ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কারিমের সূরা মায়েদার ৩৩নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন, ‘যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধ করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয় তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদের হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে। নতুবা তাদের হস্তপদ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে কিংবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হলো তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা। আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। ’ -সূরা মায়েদা ৩৩

বর্ণিত আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা কুরতুবি (রহ.) বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চার ধরনের। যথা- ক. হত্যাও করে লুণ্ঠনও করে, খ. হত্যা করে লুণ্ঠন করে না, গ. হত্যা করে না, লুণ্ঠন করে ও ঘ. ত্রাস সৃষ্টি করে ভয় দেখায়।

এই চার ধরনের সন্ত্রাসের চারটি শাস্তি বর্ণিত হয়েছে ওই আয়াতে।
১. যারা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে তাদের হত্যা করতে হবে। ২. আর যারা হত্যাও করে লুণ্ঠনও করে তাদের শূলে চড়ানো হবে। ৩. যারা লুণ্ঠন করে তাদের হস্তপদ বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে। ৪. দেশ থেকে বহিষ্কার করতে হবে।

যদি মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করার পরে সন্ত্রাসী তওবা করে তাহলে বিচারক তাকে মুক্তি দেবে নতুবা সন্ত্রাসীকে জেলহাজতে প্রেরণ করবে। আর সাধারণত কোরআনের বিধান হচ্ছে, মানুষকে প্রথমে নসিহতের দ্বারা সংশোধন করা। দ্বিতীয়ত শাস্তি দেওয়া।

পবিত্র কোরআনে কারিমের কোথাও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা ভূপৃষ্ঠে ফেতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না। ‘ -সূরা আরাফ ৫৬

পবিত্র কোরআনের অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করো না। ‘ -সূরা আনআম ১৫১

সূরা মায়েদার ৩৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি মানুষ হত্যার অপরাধ বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজের হেতু ব্যতীত কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। ‘

সূরা নিসার ৯৩নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মোমিনকে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করবে, তার শাস্তি হলো জাহান্নাম। মহান আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন। তাকে অভিসম্পাত করবেন এবং তার জন্য জাহান্নামের মহা শাস্তি প্রস্তুত রাখবেন। ‘

এভাবে কোরআনে কারিমের বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্ন প্রসঙ্গে, বিভিন্নভাবে আল্লাহতায়ালা সন্ত্রাসের প্রতি কঠোর হুমকি প্রদর্শন করেই ক্ষান্ত হননি বরং শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মাধ্যমে এসব বিধানাবলি বাস্তবায়নও করেছেন। যার ফলে আইয়ামে জাহিলিয়াতের সময়কার মানুষগুলো সোনার মানুষে পরিণত হয়ে গিয়েছিলেন। প্রাপ্ত হয়েছিলেন জান্নাতের সুসংবাদ। সেই বর্বর যুগের মানুষের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা ছিলে আগুনের গর্তের কিনারায়। অতঃপর তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করেছেন। এভাবেই আল্লাহ নিজের নিদর্শনগুলো প্রকাশ করেন। যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হও। ‘ -সূরা আল ইমরান ১০৩

ইসলামের সঙ্গে সন্ত্রাসের দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই। দেখুন, নবী করিম (সা.) ও তার সাহাবারা ইতিহাসের সব থেকে বর্বর নির্যাতন সহ্য করেছেন। যখন তারা নির্যাতিত হচ্ছিলেন, তখন তারা কি সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে ইসলামের শত্রুদের হত্যা করতে পারতেন না জঙ্গি তৎপরতা প্রদর্শন করে প্রতিপক্ষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারতেন না বরং তারা অমানবিক নির্যাতন সহ্য করে মৃত্যুকেই বরণ করেছেন, তবুও অনিয়মতান্ত্রিক পথ, সন্ত্রাসের পথ অবলম্বন করেননি বা কোনো ধরনের বক্র চিন্তা করেননি।

ইসলাম সাম্য-মৈত্রীর আদর্শ, সেই ইসলাম কোনোভাবেই সন্ত্রাস বরদাশত করেনি। কোনো মানুষ সামান্যতম অসুবিধা ভোগ করুক এটাও ইসলাম সমর্থন করে না। কারণ ইসলামের কাছে মানুষের সম্মান-মর্যাদা অনেক উচ্চে। এই মানুষকে আল্লাহতায়ালা অন্যসব সৃষ্টির ওপর প্রাধান্য দান করেছেন, পৃথিবীতে নানা জীবনোপকরণ দিয়েছেন। এমনকি আল্লাহর রাসূল মানুষের প্রতি অসীম সম্মান প্রদর্শন করেছেন। আর সেই মানুষকেই আল্লাহর আইন চালুর নামে বোমাবাজি, সন্ত্রাস আর জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে হত্যা করা কি ইসলাম সমর্থন করতে পারে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *