ইস্পাতের কাঁচামাল পরিবহনে বেপরোয়া চুরি-ছিনতাই
বন্দরের বিভিন্ন জেটি থেকে ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল (স্ক্র্যাপ) পরিবহনে চুরি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ট্রাকচালকেরা। ঘটেছে চালককে ছুরিকাঘাতের মতো ঘটনাও।
এ অবস্থায় রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টা থেকে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ধর্মঘট পালন করে ডাম্প ট্রাকের চালকেরা।
এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের উপদেষ্টা কর্নেল (অব.) শওকত ওসমান বলেন, বিদেশ থেকে আমদানি করা স্ক্র্যাপ ট্রাকে পরিবহনের সময় সংঘবদ্ধচক্র চুরি, ছিনতাই এবং চাঁদাবাজি করছে।
চুরির সময় বাধা দিলে বা গাড়ি না থামালে চালকদের ওপর হামলা হচ্ছে। ছুরিকাঘাত করা হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশি টহল কমে যাওয়ার সুযোগে নতুন একশ্রেণির চাঁদাবাজ চক্রের উদয় হয়েছে। আমরা সরকারের প্রতি নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন ও সাপ্লাইচেইন স্বাভাবিক রাখার জন্য ইস্পাতের কাঁচামাল পরিবহনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি, টহল বাড়ানোর আহ্বান জানাই।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা ইস্পাতের কাঁচামাল খালাস হয় বন্দরের মূল জেটি এবং সদরঘাটের পাঁচটি জেটিতে। বিএসআরএম, আবুল খায়ের, জিপিএইচ ও কেএসআরএম—এই চারটি বড় শিল্প গ্রুপের কাঁচামাল নিয়মিত এসব জেটিতে খালাস হয়। জেটি থেকে ডাম্প ট্রাকে স্ক্র্যাপগুলো কারখানায় নেওয়া হয়। এ সময় মূলত ছিনতাই ও চুরির ঘটনা ঘটে। বন্দর থেকে ইস্পাত কারখানা পর্যন্ত ২০-৩০টি জায়গায় বিভিন্ন চক্রের দুর্বৃত্তরা স্ক্র্যাপ লুট করে। এর মধ্যে সদরঘাট, মাঝিরঘাট, চাম্বালী ঘাট, রেল বিট, মাদারবাড়ী, কবরস্থান, কদমতলী, দেওয়ানহাট, পানির ট্যাংক, অলংকার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
গত ৭ সেপ্টেম্বর ভোর ৫টায় সদরঘাটে দুর্বৃত্তরা গাড়ি থেকে স্ক্র্যাপ নামিয়ে ফেলে এবং গাড়ির চাকা খুলে ফেলার চেষ্টা করে। বাধা দেওয়ায় চালককে ছুরিকাঘাত করে। পরে স্থানীয় চালকরা তাকে মেডিকেলে নিয়ে যান। ওই দিন রাত আটটায় ১০-১৫ জন দুর্বৃত্ত লাঠি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে জিপিএইচ ইস্পাতের স্ক্র্যাপ পরিবহনকারী নূর লজিস্টিকের রোড স্কর্টদের স্ক্র্যাপ লুট করার হুমকি দেয়। খবর পেয়ে জিপিএইএচের সুপারভাইজার বাদল উপস্থিত হলে তাকেও আক্রমণ করে। এর আগে ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাত ২টার দিকে জিপিএইচের নিরাপত্তাকর্মী আকাশ বড়ুয়াকে মারাত্মক জখম করে।
জিপিএইচের একজন কর্মকর্তা জানান, বড় দুই টুকরা লোহা ট্রাক থেকে ফেলে দিতে পারলে ১ টন স্ক্র্যাপ হয়ে যায়। যার বাজার মূল্য প্রায় অর্ধলাখ টাকা। এভাবে কোটি কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে ইস্পাত শিল্পমালিকদের।