স্বাস্থ্য

উদ্বেগ বাড়াচ্ছে করোনার নতুন ধরন, প্রয়োজন সমন্বিত পদক্ষেপ

শীতে বিভিন্ন মৌসুমি ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যায়। এর মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে করোনার নতুন ধরন বা উপধরন জেএন.১। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে করোনায় সংক্রমণের হার বেড়েছে চার গুণের বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার মূল চিত্র এর থেকেও বেশি। শীত কমলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে করোনা সংক্রমণ কয়েক গুণ বাড়তে পারে।

বর্তমানে দেশে করোনার ওমিক্রন ধরনের জেএন.১ উপধরনের সংক্রমণ ঘটতে দেখা যাচ্ছে। এ উপধরনটিতে আক্রান্তদের লক্ষণ প্রকাশের তীব্রতা কম হলেও তা দ্রুত ছড়ায়। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তি, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও যাদের কোমরবিডিটি (একসঙ্গে একাধিক রোগ) আছে, তাদের জন্য এটি বড় ঝুঁকি বহন করছে।

পরিতাপের বিষয়, বর্তমানে করোনার নতুন এ উপধরনটি চোখ রাঙালেও রোগটি প্রতিরোধে কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এমন বাস্তবতায় জেএন.১ উপধরনটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, অতি দ্রুত ছড়ানোটাই ভীতির কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও নতুন উপধরনটিকে ‘ভেরিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ বা এর দিকে নজর রাখার মতো ধরন বলে জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ২৮ জন। সব মিলে দেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৪৮১-তে। আর আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ৪৬ হাজার ৯৬৩। এছাড়া করোনায় এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ১৪ হাজার ৩৩৯ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিদপ্তর যে শনাক্তের হার দেখাচ্ছে, প্রকৃত হার এর চেয়ে অনেক বেশি। সংক্রমিত ব্যক্তি সাধারণ জ্বর, ঠাণ্ডায় কভিড-১৯ শনাক্তের পরীক্ষা করাচ্ছে না। তাই শনাক্তও হচ্ছে না। যারা পরীক্ষা করাচ্ছে তারা কোনো জরুরি প্রয়োজনে করাচ্ছে। হয় সার্জারি করার আগে, নয়তো বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে বছর শনাক্ত হয় পাঁচ লাখ ১৩ হাজার ৫১০ জন। মৃত্যু হয় সাত হাজার ৫৫৯ জনের।

পরের বছর ২০২১ সালে শনাক্ত হয় ১০ লাখ ৭২ হাজার ২৯ জন। মৃত্যু হয় ২০ হাজার ৫১৩ জনের। ওই বছরে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জন শনাক্ত হয় ২৮ জুলাই। ২০২২ সালে শনাক্ত হয় চার লাখ ৫১ হাজার ৫৮৬ জন। মৃত্যু হয় এক হাজার ৩৬৮ জনের। ২০২৩ সালে শনাক্ত হয় ৯ হাজার ১৮৯ জন। মৃত্যু হয় ৩৭ জনের।

বর্তমানে করোনার নতুন উপধরন জেএন.১-এর কারণে সংক্রমণের হার কিছুটা বেড়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, শীত কমলে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি রোগীর সংখ্যা কয়েক গুণ বাড়তে পারে। এই অবস্থায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সর্দি-কাশি হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সরকারকেও এ বিষয়ে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ যখন কোনো রোগের সংক্রমণ বেশি হয়, তখন স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর প্রভাব পড়ে। রোগী বেশি হলে হাসপাতালগুলোতেও চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে স্বাস্থ্য পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে রোগ যাতে বেশি না ছড়ায়, সেদিকে নজর দিতে হবে।

মনে রাখতে হবে, জেএন.১-এর ঝুঁকি কম থাকলেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দেওয়ায় এটি অনেক বেশি কার্যকর। এ কারণে এর সংক্রমণ বৃদ্ধির বিষয়টি হেলাফেলা করা যাবে না। ভাইরোলজিস্ট, চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিদদের পরামর্শ নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

এছাড়া আইইডিসিআরকে ভাইরাসের জিনগত নকশা উন্মোচনের কাজও বাড়াতে হবে। করোনার নতুন উপধরনটির বৈশিষ্ট্য, ছড়িয়ে পরার শঙ্কার দিক এবং প্রতিরোধের ক্ষেত্রে টিকার কার্যকারিতা ইত্যাদি বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, একুশে পত্রিকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *