উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বাংলাদেশের নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদিরা সিম্পসন এবং যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক সাক্ষাৎ করেছেন।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সচিবালযয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অফিস কক্ষে পৃথক বৈঠকে কূটনীতিকবৃন্দ উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
আস্ট্রেলিয়ার দুই প্রকল্প নিয়ে উপদেষ্টার আগ্রহ
আলোচনা শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারকে অভিনন্দন জানানোর কারণে অস্ট্রেলিয়া সরকারকে ধন্যবাদ জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এটি ছাত্র জনতা সরকার এবং এই সরকারের মূল লক্ষ নতুন বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করা, এজন্য অস্ট্রেলিয়ার সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের যুবসমাজ তথ্য প্রযুক্তিতে আগ্রহী এবং পারদর্শী। তিনি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যুবসমাজকে অধিকতর দক্ষ করে গড়ে তুলতে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। পাশাপাশি সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে ট্রেনিং প্রদানের জন্য অস্ট্রেলিয়াকে অনুরোধ করেন।
ডেপুটি হেড অফ মিশন ক্লিংটন প্রবক তাদের দুটি প্রকল্প এআই বেইজিড সলিউশন এবং সাবমেরিন ক্যাবলে অস্ট্রেলিয়া সরকারের নতুন সংস্করণ যার নাম কেবল কানেক্টিভিটি অ্যান্ড রেজেলিয়ান্স সেন্টার- এর কথা উল্লেখ করে বলেন, এ দুটো প্রকল্প নিয়ে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চান। এআই বেইজড সলিউশন অনেকটা গুগল ট্রান্সলেটের মত, বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলে আদিবাসীরা বিশেষ করে চাকমা মারমা তাদের মাতৃভাষায় কথা বললে তা লিখিত ভাবে স্ক্রিনে ভেসে উঠবে। এ দুটি প্রকল্পে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
ক্লিংটন প্রবক বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন বিষয়ে জানতে চান এটা কি নির্বাচনের আগে হবে না নির্বাচিত সরকারের কাছে একটা রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে। উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, যেহেতু আমরা দেশকে পুনর্গঠন করতে চাই তাই সংবিধান সংশোধন আবশ্যক। আমরা চাই জনগণের কথাই সংবিধানে উঠে আসুক। সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে, গণপরিষদ আহবান করে আমরা সংবিধান সংশোধন করব।
হাইকমিশনার তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অগ্রাধিকার বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, তিনি এমন একটি তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টর গড়ে তুলতে চান যা দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে।
নাহিদ ইসলাম আন্দোলনের সময় হত্যাকাণ্ডের আন্তর্জাতিক বিচার করার ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, বিশ্ববাসীর জানুক আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সঙ্গে কী নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে। ব্যবসা এবং বিনিয়োগে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া যৌথভাবে কাজ করবে উল্লেখ করে আলোচনা শেষ হয়।
সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে যৌথভাবে কাজ করতে সম্মত
ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্য যৌথভাবে আইসিটি, সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি মিডিয়ার স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার বিষয়েও কথা বলেন। উভয় দেশ সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করার ব্যাপারে সম্মত হয়।
উপদেষ্টা বলেন, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের যে ধারাগুলো নিয়ে বিতর্ক আছে সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে, প্রয়োজনে সেগুলো সংশোধন করা হবে। তিনি আরো বলেন, গত ১৫ বছরের বাংলাদেশে যে ফ্যাসিস্ট সরকার ছিলো তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি এবং আন্দোলনের সময় যে গণহত্যা তারা চালিয়েছে এবং এর পরিণতি সম্পর্কের বিশ্ববাসীর কাছে প্রচার করতে চাই- এ বিষয়ে আমরা যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা জানি যুক্তরাজ্য প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে এবং এ বিষয়ে তাদের জ্ঞানও অনেক। এই বিষয়গুলো যদি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করা যায় তাহলে আমাদের সরকার তথা দেশের মানুষ উপকৃত হবে।
তিনি আরো বলেন, আইসিটি ডিভিশনে আমাদের কিছু প্রকল্প আছে যাতে তরুণদের নতুন নতুন উদ্যোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হয় সেই প্রকল্প গুলো আরো আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। আমরা এই তরুণদের আধুনিক প্রশিক্ষণ দিতে চাই পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিংকেও বাংলাদেশের তরুণরা ভালো করছে সে বিষয়গুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক করা প্রয়োজন। এর বাইরে এমন কিছু প্রকল্পের কথা ভাবছি যেখানে আমাদের তরুণদের ব্যবহার করা এবং বিদেশে আমাদের যে দক্ষ জনবল আছে তাদেরকে সম্পৃক্ত করা যায়।
হাইকমিশনার ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, বিগত সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করেছে। আমাদের ডাটাবেজ এবং ইনফরমেশন আপ টু ডেট রাখার মাধ্যমে সেই বিষয়ে স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করছি।
সাক্ষাৎকালে অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্য হাইকমিশনের প্রতিনিধিবৃন্দ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ডা. মোঃ. মুশফিকুর রহমান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মোঃ. সামসুল আরেফিন উপস্থিত ছিলেন।