উৎসবে সরব বরিশাল-ঢাকা নৌরুট
স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে যাত্রী সংকটে দিন পার করছে বরিশাল-ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি নৌরুটের বিলাসবহুল লঞ্চগুলো। যদিও ইদানীং বড় উৎসবে অর্থাৎ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা সহ লম্বা ছুটির সময়গুলোয় এসব লঞ্চে যাত্রীর চাপ দেখা যাচ্ছে।
গত ঈদুল ফিতরের পর কোরবানির ঈদে আপ-ডাউন ট্রিপ মিলিয়ে সর্বোচ্চ যাত্রী পেয়েছে বরিশাল-ঢাকা, ঝালকাঠি-ঢাকা, বরগুনা-ঢাকা, পিরোজপুর-ঢাকা, পটুয়াখালী-ঢাকা রুটের লঞ্চগুলো। আর বাকি সময়টায় রুটগুলোয় কম লঞ্চ পরিচালনা করেও ডেক বা কেবিনেও যাত্রী পরিপূর্ণ করা যায়নি। যদিও ঢাকা-ভোলা রুটের পরিস্থিতি এর ঠিক উল্টো। যাত্রী হওয়ায় এখন স্বাভাবিক সময়েই রাতের পাশাপাশি দিনেও এ রুটের বিভিন্ন ঘাটে লঞ্চ পরিচালনা হচ্ছে।
বাকী রুটের লঞ্চের স্টাফরা বলছেন, পদ্মা সেতুর কারণে সময় বেঁচে যাওয়ায় লঞ্চের যাত্রীরাও বাসমুখী হয়েছেন। ২০২২ সালে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর প্রথম বছরে নৌপথে যাত্রী ছিল না বললেই চলে। এমনকি ভাড়া কমিয়েও বছরজুড়ে সেইভাবে যাত্রী আর পাওয়া যায়নি লঞ্চে। তবে সময়ের সাথে সাথে লঞ্চে কিছু যাত্রী ফিরেছে, যদিও এর আগেই ট্রিপ কমিয়ে দিয়ে, রোটেশন পদ্ধতিতে লঞ্চ পরিচালনা শুরু হয়েছে গোটা দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে।
বরিশাল-ঢাকা রুটের বিলাসবহুল লঞ্চ কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম সুরভি শিপিং লাইন্সের কর্মকর্তা মো. রেশাদ জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর নৌপথে যাত্রী খরা শুরু হয়। এমনকি পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর প্রথম বছর ঈদ-কোরবানিতেও যাত্রীর খরা ছিল। তবে, চলতি বছরে ঈদ-কোরবানিসহ লম্বা ছুটির সময়গুলোয় যাত্রী হচ্ছে প্রচুর। অর্থাৎ উৎসব কেন্দ্রিক সরব হচ্ছে নৌরুট।
তবে লঞ্চ মালিকরা বলছেন, এতে করেও সারা বছরের লোকসান কমানো যাবে না। তাই উৎসব শেষে, যাত্রী চাপ কমে গেলে আগের মতো সব কোম্পানি মিলেই বরিশাল-ঢাকা রুটে লঞ্চের সংখ্যা কমিয়ে দেবে। এতে লাভ না হলেও লোকসান কিছুটা হলেও ঠেকান যাবে। এ মুহূর্তে কোম্পানির রোটেশনের প্রথাকেই উত্তম ভাবছেন ঘাটের কর্মচারীরা।
জুয়েল নামে এক শ্রমিক জানান, স্বাভাবিক সময়ে উভয় প্রান্ত দিয়ে এত কম যাত্রী হয় যে দুই-তিনটার বেশি লঞ্চের প্রয়োজন হয় না। আগে আগাম বুকিং দিয়েও লঞ্চের কেবিনের টিকিট মিলতো না। আর এখন তো ঘাটে এসে লঞ্চ ছাড়ার আগেও কেবিন পাওয়া যায়। যদিও সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ঢাকা ও বরিশাল থেকে এবং শনিবার বরিশাল থেকে লঞ্চে কেবিন পাওয়া কিছুটা কঠিন।
এদিকে বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এই ঈদের শেষে লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা বেশি। বরিশাল নদী বন্দর থেকে শুক্রবার সর্বোচ্চ ১৩টি লঞ্চ সরাসরি ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রীদের নিয়ে রওনা দেয়।
এ বিষয়ে সুন্দরবন লঞ্চ কোম্পানির কাউন্টার ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, ঈদের ছুটি শেষ হওয়ায় শুক্রবার যাত্রী তুলনামূলক বেশি। তবে শনি-রোববারের পর যাত্রীর চাপ আর তেমন থাকবে না।
বরিশাল সদর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জলিল বলেন, শুক্রবারের মতো কর্মস্থলে ফিরতে নদী বন্দরে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌ-পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। যাত্রীরা যেন নিরাপদে ফিরতে পারে তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যাত্রী বাড়লেও কোনো লঞ্চ যেন অতিরিক্ত যাত্রী না নেয় সেই নির্দেশনা দেওয়া আছে। আর নির্ধারিত সময়ের বেশি পন্টুনেও থাকতে দেওয়া হচ্ছে না।