এইচএসসির ফল বদলায়নি সচিবের ছেলের, রয়ে গেল ‘রহস্য’
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলের এইচএসসির পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফলে কোনো পরিবর্তন হয়নি। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) প্রকাশিত পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফলের তালিকায় নেই সচিবের ছেলের রোল নম্বর। বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, যাদের ফলাফল পরিবর্তন হয়নি তাদের রোল রেজাল্ট শিটে নেই।
যদিও পুনঃনিরীক্ষণের এই আবেদন করেননি সচিবের পরিবারের কেউ। ছেলেকে জিপিএ-৫ ‘পাইয়ে’ দিয়েছেন এমন সন্দেহ থেকে অজ্ঞাত কেউ সব বিষয়ে পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেছিলেন টেলিটকের মাধ্যমে। বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশের দ্বারস্ত হন সচিবের স্ত্রী। অজ্ঞাত সেই ব্যক্তিকে শনাক্তে কাজ করছে পুলিশ। তবে ২০ দিন ধরে চলা এ কাণ্ডে বোর্ডের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অজ্ঞাত সেই ব্যক্তিকে খুঁজছে পুলিশ
সচিবের ছেলের উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণে অজ্ঞাত আবেদনকারীকে শনাক্ত করতে গত ২১ ডিসেম্বর বোর্ড কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে পুলিশ। অজ্ঞাত ব্যক্তির ফোন নম্বর জানতে চেয়ে সেই চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বর্তমান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।
বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ এম এম মুজিবুর রহমান সিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের কাছে পুলিশ মোবাইল নম্বর জানতে চিঠি দিয়েছে। আমরা সেভাবে এখনো কাজ শুরু করিনি।অফিশিয়াল একটা প্রসেসের মাধ্যমে হবে। এদিকে পুলিশ তাদের মতো কাজ করছে। আমরা টেলিটককে এখনো চিঠি দেইনি। আগামীকাল (বুধবার) দিবো।
তবে বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, যে অজ্ঞাত টেলিটক নাম্বার থেকে পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করা হয়েছে সেই নম্বরটি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার স্থানীয় একটি কম্পিউটারের দোকানের। যদিও এ বিষয়ে টেলিটক থেকে কোনো তথ্য জানানো হয়নি বলেও জানা যায়।
সাবেক সচিবের থানায় জিডি
মঙ্গলবার পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফলের দিনে সচিবের স্ত্রীর করা সাধারণ ডায়েরির তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সচিব আব্দুল আলীমকে ফোনে জানিয়েছেন তাঁর নম্বরটি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তার ফোন পেয়ে তাঁকে জড়িয়ে নতুন কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে— এমন সন্দেহ থেকে নগরের কোতোয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন অধ্যাপক আলীম।
এর আগে বর্তমান সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলের খাতা পুনঃনিরীক্ষণের দাবি তুলে গণমাধ্যমে বক্তব্য রেখেছিলেন বোর্ডের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বোর্ডের সচিবের ছেলের পুনঃনিরীক্ষণের আবেদনে আমার মোবাইল নম্বরটি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক। বিষয়টি তদন্তপূর্বক সত্য উদ্ঘাটনের জন্য থানায় জিডি করেছি। কারণ আমি বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালীন ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের প্রক্রিয়ায় অসঙ্গতির কারণে বর্তমান সচিব তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দোষী সাব্যস্ত হন। এরপর থেকে আমার বিরুদ্ধে তিনি নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে আসছেন।’
একই বিষয়ে বক্তব্য জানতে বোর্ডের সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথের মোবাইলে কয়েক দফা ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
‘নির্বিকার’ বোর্ড কর্তৃপক্ষ!
খোদ বোর্ড সচিবের ছেলের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সবার মুখে মুখে তদন্তের দাবিতেও ধোঁয়াশা পরিস্কার করছে না বোর্ড কর্তৃপক্ষ। শুরু থেকেই বিষয়টি ‘সচিবের ব্যক্তিগত’ বলে এড়িয়ে গেছেন বোর্ড চেয়ারম্যান। উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণকাণ্ডেও নির্বিকার ছিল বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুস্তফা কামরুল আখতারকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
এর আগে ‘ভুয়া’ পুনঃনিরীক্ষণ আবেদন আমলে না নেয়ার জন্য বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে আবেদনও করা হয়। যদিও সেই সময় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুস্তফা কামরুল আখতার বিষয়টি অস্বীকার করেন।