চাকরিজাতীয়

এক আবেদনেই এবার সব বিসিএস দিতে পারবেন চাকরিপ্রার্থীরা

চাকরির বয়স থাকা পর্যন্ত প্রতিটি বিসিএসেই আলাদা আলাদা আবেদন করেন আবেদনকারীরা। এভাবে যেমন সময় নষ্ট হয়, তেমনি বারবার আবেদনের ঝক্কিও পোহাতে হয় চাকরিপ্রার্থীদের। এ পদ্ধতিতে নতুনত্ব এনে সমস্যাটির সমাধানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।

দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি পত্রিকায় দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এই বিষয়ে পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। আর একবার আবেদনে অনেকবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকার ব্যাপারটিকে দারুণ উদ্যোগ বলছেন চাকরিপ্রার্থীরা।

সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘চাকরিপ্রার্থীরা প্রতিটি বিসিএসে আলাদা আলাদা আবেদন করেন। কিন্তু প্রতিবারই তো একই তথ্য পূরণ করেন। এটি একটি সময় সাপেক্ষ বিষয়। আমরা চাইছি প্রার্থী একবার আবেদন করবেন। সেই সময় পিএসসি ওয়েবসাইটে তাদের তথ্য দিয়ে ফরম অনলাইনে পূরণ করবেন। সব তথ্য ঠিক থাকলে ফরম সাবমিট করবেন। এই কাজটি হবে শুধু একবার। তার ইউনিক আইডি তৈরি হয়ে থাকবে পিএসসিতে। যতবার পরীক্ষা দেবেন, ততবার শুধু কিছু তথ্য আপডেট করলেই সেই আইডি দিয়েই আরেক বিসিএসে অংশ নিতে পারবেন। আবার কোনো বিসিএসে কোনো পর্যায়ে আছে তার আবেদন সেটাও ওয়েবসাইটে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের।

সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘আমরা চাইছি প্রার্থীদের ভোগান্তি কমাতে। আর পিএসসিতে আধুনিক করতে। তিনি জানান, অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিপ্রার্থীর ইউনিক আইডি থাকে। সেটি একবার পূরণ করলে তা থেকে যায়। ই-মেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে প্রবেশ করলে ওই প্রতিষ্ঠানের নানা পদের চাকরিতে আবেদন করতে পারেন তিনি। এ জন্য দরকারি বেশির ভাগ তথ্যই একবারের জন্যই পূরণ করতে হয়।

আমরাও সেই দিকে এগোতে চাচ্ছি। ৪৭তম বিসিএস থেকেই এই ইউনিক আইডি তৈরির পরিকল্পনার কথা জানান পিএসসি চেয়ারম্যান।’এ উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাব্বির হোসেন নামের এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, তিনি বর্তমানে একটি ব্যাংকে কর্মরত আছেন কিন্তু চারটি বিসিএসে অংশ নিয়েছেন। সাব্বির বলেন, একবার আবেদন আর ১০ বার আবেদন, সব সময়ই বেসিক তথ্যগুলো দিতেই হয়। যেমন নাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরীক্ষার ফল বা গ্রেড, মা-বাবার নাম, বোর্ড এসব। ওগুলো তো সব বিসিএসের জন্যই প্রযোজ্য অথচ বারবার একই তথ্য দিয়ে আলাদা আলাদা আবেদন করতে হয়। অনেকে আছে নিজে পূরণ করতে পারেন না। দোকান থেকে করতে গেলে ভুল হয়। আলাদা টাকাও খরচ হয় বারবার আবেদনের ফরম পূরণে। সব মিলে এই কাজ যদি পিএসসি একবার করতে দিয়েই অনেকবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ চালু করে তাহলে তা হবে দারুণ এক উদ্যোগ।

আফজাল হোসেন নামের এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, তিনি তিনটি বিসিএস দিয়েছেন। একটিতে লিখিত পরীক্ষা দিয়ে ফলের অপেক্ষা করছেন। বারবার ফরম পূরণের ঝামেলা যদি একবারেই চুকে যায়, তাহলে অনেকেই দারুণ উপকৃত হবেন বলে মনে করেন তিনি। তবে তথ্য সংশোধনের অপশন থাকলে সেটি আরও ভালো হবে বলে তার মন্তব্য।

গত সাত বছরে ৯টি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। এর মধ্যে ৩৯তম ও ৪২তম ছিল বিশেষ বিসিএস। শুধু চিকিৎসক নেওয়া হয়েছিল। বাকিগুলো সাধারণ বিসিএস। সেগুলো হলো ৩৮তম বিসিএস, ৪০তম বিসিএস, ৪১তম বিসিএস, ৪৩তম বিসিএস, ৪৪তম বিসিএস, ৪৫তম ও ৪৬তম বিসিএস।

পিএসসি সূত্রে জানা যায়, ৩৮তম বিসিএসে আবেদন করেছিলেন ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৮ জন প্রার্থী। ৪০তম বিসিএসে ৪ লাখ ১২ হাজার প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। ৪১তম বিসিএসে রেকর্ডসংখ্যক ৪ লাখ ৭৫ হাজার প্রার্থীর আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। ৪৩তম বিসিএসে আবেদন জমা পড়ে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৯০টি। ৪৪তম বিসিএসে মোট আবেদন করেন ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭১৬ জন। ৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় আবেদন করেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার পরীক্ষার্থী। সর্বশেষ ৪৬তম বিসিএসের ৩ লাখ ৩৮ হাজার প্রার্থী আবেদন করেন।

আবেদনকারীর সংখ্যা থেকে দেখা যায়, সবশেষ ছয়টি সাধারণ বিসিএসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছিল ৪১তম বিসিএসে। আবেদনের হিসাবে ৪৩তম বিসিএস দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থায় আছে। ব্রুনাই, বাহামা, আইসল্যান্ড, বার্বাডোজ, সেন্ট লুসিয়া, গ্রানাডাসহ কয়েকটি দেশের জনসংখ্যাও এত নয়, যতজন ৪৩তম বিসিএসে আবেদন করেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *