এবারই প্রথম চট্টগ্রামে ভোট দেবেন ৫৬ হিজড়া
স্বপ্না,আশা,গীতা; লিঙ্গ পরিচয়ে ওরা কেউ নারী অথবা পুরুষ নন। তাদের শরীরী জন্ম পুরুষের হলেও তারা নারীর মত মত বাঁচেন, নিজেকে পরিচয় দেন নারী হিসেবে। সরকারি দলিলে ট্রান্সজেন্ডার বা রুপান্তরকামী এসব মানুষের পরিচয় ‘হিজড়া’। এদেশের বেশিরভাগ রুপান্তরকামী মানুষের জীবন কাটে হাত পেতে, টাকা তুলে। কাগজে কলমে তাদের দেশের নাগরিকত্ব ছিল না। জাতীয় পরিচয়পত্র ছিল না বলে করোনার মহামারিতে টিকাও নিতে পারেননি। তবে ‘হিজড়া’ পরিচয়ে এবার প্রথমবারের মত তৃতীয় লিঙ্গের ৩৬০ জনকে ভোটার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারি অনষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনে তৃতীয় লিঙ্গের ৫৬ জন মানুষ ভোট দেবেন।
জেলার ১৬টি আসনে ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৩৯৭ জনের মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৫৬ জন। এর মধ্যে মধ্যে চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-খুলশী-পাহাড়তলী-হালিশহর) আসনে ভোটার সংখ্যা বেশি। এ আসনে তৃতীয় লিঙ্গের ২৬ জন বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। বাকি ৩৬ জন চট্টগ্রামের অন্যান্য আসনের কেন্দ্র থেকে ভোট দেবেন।
কোন আসনে কতজন ভোট দেবেন
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে ২ জন, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে ৩ জন, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) ২ জন, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে ৮ জন, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে ১ জন, চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-পাঁচলাইশ-বোয়ালখালী) আসনে ১ জন, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে ৮ জন, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-খুলশী-পাহাড়তলী-হালিশহর) আসনে ২৬ জন,
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে ২ জন, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে ১ জন এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে ২ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রয়েছেন। এছাড়া, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে, (রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী আংশিক) আসন, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া), চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসন এবং চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে তৃতীয় লিঙ্গের কোনো ভোটার নেই।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কেবিনেট সভায় নারী পুরুষের পাশাপাশি হিজড়াদের পৃথক লিঙ্গীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং উল্লেখ করা হয় যে, তারা শিক্ষাসহ অন্যান্য সকল মৌলিক অধিকারে অগ্রাধিকার পাবে। পরবর্তীতে ২৬ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে এক গেজেটে বলা হয় ‘সরকার বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীকে হিজড়া লিঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত করিয়া স্বীকৃতি প্রদান করিল’। এরপর ২০১৯ সালে হিজড়ারা স্বতন্ত্র লিঙ্গীয় পরিচয়ে ভোটাধিকার লাভ করে। বর্তমানে তারা পাসপোর্ট কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্রে লিঙ্গীয় পরিচয় হিসেবে হিজড়া যুক্ত করতে পারে। এবার তৃতীয় লিঙ্গের ৩৬০ জনকে ভোটার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে।