এমপক্স: পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের?
এমপক্স বা মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাবের কারণে দুই বছরের মধ্য রোগটি নিয়ে দ্বিতীয়বার বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কী কারণে আবার সেই দশা ফিরছে, জানাচ্ছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এমপক্স কী?
মাঙ্কিপক্স হারিয়ে যাওয়া গুটি বসন্তের মত, তবে তুলনামূলকভাবে কম গুরুতর এবং সংক্রমণ বেশি ছড়ায় না। এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে জ্বর, মাথাব্যথা, গাঁট ও মাংসপেশিতে ব্যথা এবং দেহে অবসাদ।
জ্বর শুরু হওয়ার পর দেহে গুটি দেখা দেয়। এসব গুটি শুরুতে দেখা দেয় মুখে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে হাত এবং পায়ের পাতাসহ দেহের সব জায়গায়।
এই গুটির জন্য রোগী দেহে খুব চুলকানি হয়। পরে গুটি থেকে ক্ষত দেখা দেয়। জল বসন্তের মতই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেও দেহে এসব ক্ষত চিহ্ন রয়ে যায়। রোগ দেখা দেওয়ার ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।
১৯৫৮ সালে বানরের দেহে এই ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হওয়ায় এর নামকরণ হয় মাঙ্কিপক্স। যদিও এখন ইঁদুরকেই বিস্তারের প্রধান পোষক হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এই রোগে আক্রান্ত শিশু, গর্ভবতী নারী এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল বিশেষ করে এইচআইভি রোগীদের ক্ষেত্রে উচ্চ জটিলতার ঝুঁকি থাকে।
এমপক্স ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ যেমন- যৌন সম্পর্ক, গায়ে গা লাগা ও অন্যজনের খুব কাছে গিয়ে কথা বলা বা নিঃশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। তবে বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়-এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি।
বর্তমানে ভাইরাসটি খুব দ্রুত ছড়াতে থাকায় বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা কী?
ডব্লিউএইচওর সর্বোচ্চ সতর্ক ব্যবস্থাই হচ্ছে ‘বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা’। যখন কোনো রোগ নতুন বা অস্বাভাবিক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে, তখন প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং তহবিল জোরদার করার লক্ষ্যে এ সতর্কবার্তা ঘোষণা করা হয়।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে আফ্রিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের একই ধরনের সতর্কবার্তা দেখে এই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে ডব্লিউএইচও।
ফের কেন জরুরি অবস্থা?
দুই বছর আগে রোগটির ক্লেইড টু বি ধরন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল।
সে সময় দেখা গিয়েছিল, মূলত পুরুষের সঙ্গে পুরুষের যৌন মিলনের মাধ্যমে ভাইরাসের ওই ধরনটি বিস্তার পাচ্ছে। আচরণ পরিবর্তন, নিরাপদ যৌন অনুশীলন, টিকাদানের মাধ্যমে ঝুঁকিতে থাকা অনেক দেশ প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিল।
কিন্তু গত কয়েক দশক ধরেই আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে এমপক্স জনস্বাস্থ্যের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে আছে। রোগটি মানবদেহে প্রথম ধরা পড়ে কঙ্গোতে, ১৯৭০ সালে। এরপর থেকেই রোগটির প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে।
তবে কঙ্গো সবচেয়ে খারাপ প্রাদুর্ভাব দেখছে এখন। গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেখানে ২৭ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১১০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই শিশু।
এমপক্সের দুটি ধরন এখন কঙ্গোতে ছড়িয়ে পড়ছে, যার মধ্যে আছে ভাইরাসটির স্থানীয় রূপ ক্লেড ওয়ান ও ক্লেড টু বি। ‘ক্লেড’ শব্দটি দিয়ে ভাইরাসের একটি রূপকে বোঝায়।
রয়টার্স লিখেছে, নতুন প্রাদুর্ভাবটি পূর্ব কঙ্গো থেকে ছড়িয়েছে রুয়ান্ডা, উগান্ডা, বুরুন্ডি ও কেনিয়ায়।
আফ্রিকার বাইরে ক্লেইড ওয়ান বি ধরনটি প্রথম ধরা পড়েছে সুইডেনে, বৃহস্পতিবার।
পাকিস্তানে এমপক্স সংক্রমিত একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে শুক্রবার, যিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সেখানে ফিরেছেন। তবে তার ধরনটি নতুন কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পরামর্শ দিয়েছেন ডব্লিউএইচওর এক মুখপাত্র।
এখন কী ঘটছে?
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণার ফলে কঙ্গোর জন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম ও তহবিল পাওয়া সহজ হবে। ভাইরাসটি নিয়ে গবেষণা ও বিস্তার ঠেকাতে আরও ভালোভাবে নজরদারি করা দরকার।
২০২২ সালে এমপক্সের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার ডব্লিউএইচও চাইলেও দাতাদের সাড়া পায়নি। কারা টিকা পাবে তা নিয়েও তখন ব্যাপক বৈষম্য দেখা দেয়। বিশ্বব্যাপী প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় বাভারিয়ান নর্ডিক ও কে এম বায়োলজিকসের যে দুটি টিকা ব্যবহার করা হয়েছিল, তা তখন পায়নি আফ্রিকার দেশগুলো।
দুই বছর পরেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ডব্লিউএইচও বুধবার বলেছে, যেসব দেশের কাছে ওইসব টিকার মজুদ আছে, তাদের কাছ অনুদান হিসেবে টিকা পেতে আবেদন করা হয়েছে।
আফ্রিকা সিডিসি টিকা সংগ্রহের পরিকল্পনার কথা জানালেও বিস্তারিত কিছু বলেনি। তবে এমপক্সের টিকার মজুদ এখন সীমিত।
কতটা দুশ্চিন্তার?
রোগীর জন্য স্বাস্থ্য সুবিধা কতটা মিলছে তার ওপরই মৃত্যু হার নির্ভর করে। কঙ্গোতে ক্লেড ওয়ান এবং ক্লেড টু বি দুই ধরনের ক্ষেত্রেই মৃত্যুর হার প্রায় ৪ শতাংশ।
যদিও এমপক্স কোভিডের মত নয়, তবে এমন কিছু প্রমাণিত উপায় আছে যা রোগটি মোকাবিলায় কার্যকর।
জরুরি ঘোষণার মধ্যে কঙ্গো ও প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পাওয়ার চ্যালেঞ্জ প্রকাশ পেয়েছে।