এস আলমের গাড়িকাণ্ডে শোকজ, দক্ষিণের তিন বিএনপি নেতা ঢাকায়
দেশের আলোচিত-সমালোচিত শিল্পগ্রুপ এস আলমের বিলাসবহুল গাড়িকাণ্ড নিয়ে অভিযোগের জবাব দিতে ঢাকায় অবস্থান করছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির তিন নেতা। রবিবার সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখোমুখি হচ্ছেন তারা।
গাড়িকাণ্ডে অভিযুক্ত দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ঢাকায় থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তিনি বলেন, ‘যে বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছে বা অভিযোগ এসেছে; সেটি আমরা গতকাল (শনিবার) সংবাদ সম্মেলনে ক্লিয়ার করেছি। তবে কেন্দ্র থেকে যখন কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা সেটিকে প্রাধান্য দিয়ে যথাসময়েই জবাব দিব। তাই আমরা এখন ঢাকায় অবস্থান করছি।’
কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে কী জবাব দিচ্ছেন তা খোলাসা না করলেও সূত্র বলছে, তারা এ ঘটনার পেছনে তিনটি যুক্তি খাঁড়া করেছেন। প্রধানত তাঁরা ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না, বিএনপির নামে চাঁদা দাবির খবর পেয়েই তারা ঘটনাস্থলে যান। ঘটনাস্থলে যাওয়ার পেছনে যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনামের সঙ্গে মীর গ্রুপের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক জোরালোভাবে তুলে ধরছেন তিনজনই। এছাড়া বিএনপি নেতা এনামুল হক এনামের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট হয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাঁকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব দিয়েছেন। তাঁর বিরোধী পক্ষ এতে অসন্তুষ্ট হয়ে ইমেজ নষ্ট করতেই মূল ঘটনা বিকৃত করে গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছেন।
যদিও এর আগেই শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে এস আলমের গাড়িকাণ্ড নিয়ে উঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির ওই তিন নেতা। তাদের দাবি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের ভাষ্য, গত ২৯ আগস্ট নগরের কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় মীর গ্রুপের পক্ষ থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোনে প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং পরবর্তীতে বিএনপি’র নাম দিয়ে চাঁদা দাবি করছে বলে জানতে পারেন তারা। বিএনপির নামে চাঁদা দাবির কথা শুনেই তারা ঘটনাস্থলে যান।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাতে কালুরঘাট শিল্প এলাকার মীর গ্রুপের মালিকানাধীন ওয়্যারহাউস থেকে এস আলম গ্রুপের বিলাসবহুল ১৪টি গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেসময় দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এনামুল হক এনাম ও কর্ণফুলী থানা বিএনপির আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়াসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা গেছে। এ ঘটনায় সমালোচনা শুরু হলে অভিযুক্ত তিন নেতা সংবাদ সম্মেলন ডেকে অভিযোগের ব্যাখা দেন।
গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর কেন্দ্র থেকে তিন নেতাকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে শোকজ করা হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ওই শোকজে তাদের নামে দলের নীতি আদর্শ পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। দলের একজন দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে প্রকাশিত ঘটনার সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা দলের প্রতি আদর্শিক অঙ্গীকার ভঙ্গের শামিল। এ কৃত অপকর্ম দলের নেতাকর্মীদের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সুতরাং কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারণ উল্লেখপূর্বক লিখিত জবাব কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।