কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনে ১১ দিনে আয় প্রায় ৩০ লাখ
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচল করা স্পেশাল ট্রেন কয়েক দফা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা আসলেও যাত্রীদের ব্যাপক চাহিদা ও সচেতন মহলের আন্দোলনের হুমকির কারণে এ ট্রেন আরও এক মাস বাড়িয়ে ২৪ জুলাই পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
চলাচলের পর গত ১২ জুন থেকে ২২ জুন পর্যন্ত ট্রেনটিতে ১৬ হাজার যাত্রী ভ্রমণ করেছেন।
এতে ২৯ লাখ ৩৫ হাজার ৮৮০ টাকা রাজস্ব আয় করেছে রেলওয়ে।
এর আগে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেন চালিয়ে প্রথম মাসে ৫ কোটি ১১ লাখ ৫৭ হাজার ২৪০ টাকা আয় করেছিল রেলওয়ে।
গত ১ ডিসেম্বর চালু হওয়া ট্রেনটিতে ৬০ হাজার ৫২৫ জন যাত্রী ভ্রমণ করেন। এমন লাভজনক খাতকে সচল রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সচেতন নাগরিক সমাজ।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বিশেষ ট্রেনটি চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন সকাল সাতটায় ছেড়ে যায়। কক্সবাজারে পৌঁছায় সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। আবার কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছাড়ে সন্ধ্যা সাতটায়। চট্টগ্রামে পৌঁছায় ১০টায়। ট্রেনটি যাত্রাপথে ষোলশহর, জানালীহাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা ও রামু স্টেশনে থামে। বিশেষ ট্রেনে শোভন শ্রেণির আসনের জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া ৪৫ টাকা, প্রথম শ্রেণি আসনের জন্য ১৮৫ টাকা। তবে কক্সবাজার পর্যন্ত এই ভাড়া যথাক্রমে ১৮৫ ও ৩৪০ টাকা।
কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে ৫৯১৯ যাত্রী, ষোলশহর থেকে ৪০২ জান আলীহাট থেকে ৭০৫ জন, পটিয়া ৫৫৫ জন, দোহাজারী থেকে ৪২৮ জন, সাতকানিয়া থেকে ৭৪৩ জন, ডুলাহাজারা থেকে ৪৭০ জন, চকরিয়া থেকে ৬৪৮ জন, রামু থেকে ৭৫ জন, কক্সবাজার থেকে ৬০৫২ জন ভ্রমণ করেন।
গত বছরের ১১ নভেম্বর চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মিত নতুন রেললাইন উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত বছরের ১ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি পর্যটক এক্সপ্রেস নামের আরেকটি ট্রেন চালু করে রেলওয়ে। শুধু ঢাকা-কক্সবাজার রুটের দুটি ট্রেনের প্রতিটিতে ১১৫টি করে আসন বরাদ্দ রাখা হয় চট্টগ্রাম স্টেশনের জন্য। ঢাকা থেকে পরপর দুটি ট্রেন চালু করলেও চট্টগ্রাম থেকে কোনো ট্রেন দেওয়া হয়নি। রেলওয়ের এমন সিদ্ধান্তে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।
পরবর্তী সময়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও নাগরিক সমাজ ট্রেন চালুর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বিশেষ ট্রেন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গত ৮ এপ্রিল ট্রেন চলাচল শুরু হয়। চালুর পর থেকে এই ট্রেন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যাত্রীদের চাপে এরপর দুই দফায় বিশেষ ট্রেনের সময় বাড়িয়ে ১০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছিল। কিন্তু ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টারের সংকট থাকার কারণ জানিয়ে ১০ দিন (৩০ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত) ট্রেন চলাচল বাতিল করা হয়। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন চট্টগ্রামের মানুষ।
তারা বলছেন, পর্যটন এক্সপ্রেস ও কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামে দুইটি ট্রেন ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার ফলে মানুষ গন্তব্যে নিরাপদে ও নির্ভয়ে যাওয়া আসা করছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুবিধা হয়েছে। তবে দুঃখের বিষয়, একটি ট্রেন বহু অনুরোধে বিশেষ ট্রেন হিসেবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার লাইনে চলাচল করছিল। এখন সেটা বন্ধ করার পাঁয়তারা চলছে।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক মাহফুজুর রহমান বলেন, কক্সবাজার ট্রেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল। সেটা তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনা পূরণ করেছে। রেলে কিছু বদমাইশ আছে, যারা এ প্রকল্প বন্ধ করে দিতে চায়। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাদের স্বার্থের জন্য এটা করছে। সবাই মিলে রেলওয়ে ভবন গিয়ে স্মারকলিপি দিতে পারে। যদি এ ট্রেন বন্ধ হয় আমরা রেললাইনে গিয়ে বসবো।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা তারেক মোহাম্মদ ইমরান বাংলানিউজকে বলেন, কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনে আসন সংখ্যা ৭৪৩টি। কোচ রয়েছে ১৬টি। স্ট্যান্ডিং টিকিট ছাড়া প্রতিদিন আয় ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৫০ টাকা। টিকিট বেশি বিক্রি হলে আয়ও বেড়ে যায়। এ রুটে যাত্রীদের চাহিদা রয়েছে বেশি। টিকিট বিক্রিও বেশি। ট্রেনটি ১১ দিনে ১৬ হাজার যাত্রী পরিবহন করেছে। ১২ জুন থেকে চালু হওয়া স্পেশাল ট্রেনটি ২২ জুন পর্যন্ত ১১ দিনে মোট ২৯ লাখ ৩৫ হাজার ৮৮০ টাকা রাজস্ব আয় করে।
রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী জানিয়েছেন, জনবল ও ইঞ্জিন-সংকট থাকা সত্ত্বেও এ রুটে ট্রেন চলাচলের সময় বাড়ানো হয়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা উপকৃত হবেন। এ ট্রেন নিয়ে শুরু থেকেই ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে যাত্রীদের। সব সংকট কাটিয়ে আমরা এ রুটে ট্রেন চলাচল সচল রাখার চেষ্টা করছি।