কমিটি ঘোষণা ছাড়াই শেষ হলো খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন
কমিটি ঘোষণা ছাড়াই শেষ হয়েছে ৯ বছর পর অনুষ্ঠিত খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন। এদিন জেলা ছাত্রলীগের কাউন্সিল হওয়ার কথা থাকলেও শেষমেশ তা হয়নি।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে শহরের পৌর টাউন হল প্রাঙ্গণে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির পায়রা কবুতর উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
শুরুতেই শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ন-আহবায়ক মো. মনির হোসেন। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এমং মারমার স্বাগত বক্তব্যের পর সাংগঠনিক প্রতিবেদন পাঠ করেন, দপ্তর সম্পাদক অর্কিট চাকমা।
প্রত্যাশিত এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি। এতে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
সম্মেলনের শুরুতে বিএনপি-জামায়াত সরকার আমলে খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন হামলায় নিহত নেতাকর্মীদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। নীরবতা পালন শেষে খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিল্পীদের দেশাত্মবোধক গানের সাথে সাথে মনোমুগ্ধকর সম্প্রীতি নৃত্য পরিবেশন করে সম্মেলনে আগতদের মুগ্ধ করেন স্থানীয় শিল্পীরা।
সম্মেলনকে ঘিরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একঝাঁক নেতা-নেত্রী, খাগড়াছড়ি জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ ছাড়াও চট্টগ্রাম এবং খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেন।
এদিকে, নয় বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া কাঙ্ক্ষিত সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে আহ্বায়ক কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তবে দ্বিতীয় অধিবেশনের মাধ্যমে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সাংগঠনিক পদগুলো ঘোষণা বা বেল্টের মাধ্যমে নির্বাচিত করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। দ্বিতীয় অধিবেশনও আর অনুষ্ঠিত হয়নি।
কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, যে সকল পদ প্রত্যাশিতরা নাম বা কমিটি জমা দিয়েছেন তা ঢাকায় গিয়ে যাচাই বাছাই করে পরবর্তীতে কমিটি ঘোষণা করা হবে। এতে করেই সম্মেলনে আগত তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনের আশা পূরণ হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নাম প্রকাশ না শর্তে অনেকে।
অন্যদিকে দীর্ঘ নয় বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি না থাকা এবং বিভিন্ন ইউনিট কমিটিগুলো গঠন না হওয়াসহ ব্যক্তি কেন্দ্রিক নেতাকর্মীদের অপকর্ম আর জোরালো কর্মসূচি না থাকার কারণে অনেকটা এলোমেলো হয়ে পড়েছে, খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড।
ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সকল অভিযোগ মাথায় নিয়ে নয় বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া এবারের সম্মেলনে সভাপতি পদে ছিলেন, অর্ণব ত্রিপুরা টুটুল, তেপান্তর চাকমা, ক্যজাইরী মারমা, রয়েল ত্রিপুরা, জিৎজয় ত্রিপুরা ও সুপ্রিয় চাকমা। আর সাধারণ সম্পাদক পদে, মো. সাইফুল ইসলাম, নুরচ্ছাপা চৌধুরী (রাফি), মো. মনির হোসেন, ওয়াকিমং চৌধুরী, মো. শরিফুল ইসলাম ও মো. ওমর ফারুকসহ মোট ১২জন পদ প্রত্যাশী।
উল্লেখ, ২০১৫ সালের ১ জুন সর্বশেষ খাগড়াছড়ি জেলা সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায় খাগড়াছড়ি পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি টেকো চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিনের নেতৃত্বে দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। ২০১৬ সালের ২৯ জুলাই তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে বৈঠক করে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দলীয় কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি একত্রে পালনের নির্দেশ দেয়। কিন্তু এরপরও দ্বন্দ্ব না মেটায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের সব কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে উবিক মোহন ত্রিপুরাকে আহ্বায়ক করে ১৮ জন সদস্য বিশিষ্ট খাগড়াছড়ি জেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।