চট্টগ্রাম

কাঠপোড়া রোদে কচি খোকার এ কেমন শাস্তি!

মা! এখানে চাপ দিয়ে ধরে রাখো। আমি শ্বাস নিতে পারছি না। আমার কেমন যেন বমি বমি লাগতেছে।’— গলা কাটা মুরগির মতো এভাবে দড়ফড়িয়ে বুক চেপে ধরে মায়ের কাছে কথাগুলো বলছিল এক শিশু। সেই শিশুটির নাম আল হাছিন। বয়স সবে মাত্র ১০। পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে।

গরমের কারণে স্কুলে জুতা মোজা না পরা কাল হয়ে দাঁড়ালো হাছিনের জীবনে। কাঠফাটা রোদের মধ্যে পরপর দুদিন দাঁড় করিয়ে রেখে হাছিনকে শাস্তি দেন স্কুলের শ্রেণিশিক্ষক। পরে জুতা পরতে বাসায় ফেরত পাঠান ওই শিক্ষক। স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথেই জ্ঞান হারায় শিশুটি।

ঘটনাটি গত ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার নগরের খুলশীর ওয়ারলেস এলাকার গার্ডেন ভিউ ন্যাশনাল একাডেমী নামের একটি স্কুলের। বর্তমানে শিশুটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অধীনে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছে।

তীব্র গরমের কারণে শিক্ষার্থীদের সুস্থতার কথা বিবেচনায় রেখে ঈদের ছুটি শেষে আরও সাতদিন ছুটি বাড়ায় সরকার। অথচ সরকারের সেই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গত ২০ এপ্রিল থেকেই স্কুল খোলা রেখেছে গার্ডেন ভিউ ন্যাশনাল একাডেমী কর্তৃপক্ষ। এমনকি নিয়মিত হয়েছে অ্যাসেম্বলিও (প্রাত-সমাবেশ)। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিভাবক অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানালে উল্টো হুমকি-ধমকি দেওয়া হয় অভিভাবককে। ঘটনার পর থেকে শিশু হাছিনের শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন শিশুর অভিভাবক। রবিবার (২৮ এপ্রিল) স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং শাস্তি দেওয়া ওই শিক্ষকের নামে অভিযোগ দায়ের করেন শিশুটির মা।

ঘটনা প্রসঙ্গে শিশু হাছিনের মা হানান আক্তার বলেন, ‘বন্ধের নির্দেশনা অমান্য করে তারা স্কুল খোলা রাখে। এই হিট ওয়েভে স্কুল খোলা না রাখার জন্য স্কুলের গ্রুপে হাজারবার রিকোয়েস্ট করার পরও স্কুল খোলা রেখেছে। স্কুলে এই গরমে মোজা ছাড়া নরমাল জুতা পরিয়ে স্কুলে পাঠানোর কারণে ২৪ ও ২৫ এপ্রিল আমার ছেলেসহ আরও কিছু বাচ্চাকে রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রেখে শাস্তি দেন ক্লাসটিচার। শেষদিন (২৫ এপ্রিল) তো শ্রেণিশিক্ষক স্কুল থেকেই বাচ্চাকে বের করে দেন। বাচ্চা বাসায় ফেরার পথে জ্ঞান হারায়। পরে জ্ঞান ফিরলে বিস্তারিত জানতে পারি। জ্ঞান ফেরার পর টানা ৯ বার বমি করে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যায়।’

এ অভিভাবক আরও বলেন, ‘বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা উল্টো আমাকে হুমকি-ধমকি দিতে শুরু করে। তারা কোনো ধরনের সরকারি নির্দেশনা মানেন না। পুরো রোজা তারা স্কুল খোলা রেখে পরীক্ষাও নিয়েছে। আমরা তখনও বলেছিলাম যে, সব স্কুল বন্ধ দিয়েছে আপনারও স্কুল বন্ধ দেন। পুরো বাংলাদেশের সব স্কুল বন্ধ কিন্তু তারা স্কুল খোলা রেখেছে। বারবার অনুরোধ করার পরেও তারা শুনেননি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *